কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে জারি করা কারফিউ ১৪ দিনে গড়াল। মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তায় সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসায় বিধিনিষেধে আনা হয়েছে শিথিলতা। জনজীবনেও ধীরে ধীরে ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দ। বুধবারের ধারাবাহিকতায় গতকালও স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে সব অফিস, ব্যাংক, পুঁজিবাজার। সাত-সকালেই খুলে যায় দোকানপাট, বিপণিবিতান। ভোর হতেই রাজধানীর ফুটপাতে, অলিগলিতে দেখা মেলে দল বেঁধে গার্মেন্ট কর্মীদের যাতায়াতের দৃশ্য। সহিংসতায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মেট্রোরেল, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মেরামতের কাজও চলছে জোরেশোরে। তবে ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল রেলের চাকা ঘুরলেও ছিল না যাত্রী।
গতকাল সকালে কারফিউ শিথিল হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই চিরচেনা রূপে ফেরে রাজধানী। তীব্র যানজট দেখা যায় বাড্ডা-রামপুরা সড়কে। পুরো রাজধানীতেই যানজট ছিল বলে উবার চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ছন্দপতন ছিল শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় সাত-সকালে সড়কে দেখা মেলেনি ইউনিফর্ম পরা শিশুগুলোকে। স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চা নিয়ে অনেক নারীকে কেনাকাটায় বের হতে দেখা যায়। শেষ কর্মদিবসে ব্যাংকগুলোতেও দেখা গেছে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। বেলা আড়াইটায় বাড্ডায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে শতাধিক মানুষকে টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সিরিয়াল পেছনে থাকায় অনেককে সড়কে চায়ের দোকানে এসে সময় কাটাতে দেখা যায়। ব্যাংকটির গার্ড জানান, কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় চালুর পর থেকেই ভিড় লেগে আছে। বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় ভিড় আরও বেশি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে গত ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০ জুলাই ছিল সরকারি ছুটি। ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২৪ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত কর্মঘণ্টা কমিয়ে চলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যাংক। গত বুধবার থেকে আবারও পুরনো নিয়মে চালু হয়েছে অফিস পাড়া। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় এখনো পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়নি কারফিউ। দেশের অধিকাংশ এলাকায় রাতে কারফিউ জারি থাকছে। গতকাল রাতেও রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে, সড়কে ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। এ সময় কাউকে সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হয়। কোথাও জটলা দেখলে সরিয়ে দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকছে। অন্যান্য জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন কারফিউয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
আমাদের সংবাদকর্মীদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় কারফিউ শিথিল থাকবে ১৬ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে পুনরায় কারফিউ বহাল হবে। রংপুর : শুক্রবার রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিলেট : গতকালের মতো আজ শুক্রবারও সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে সিলেটে। রাজশাহী : আগের দিনের মতোই শুক্রবার রাজশাহী বিভাগে কারফিউ শিথিল থাকবে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজশাহীতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা, নাটোরে ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা, পাবনায় ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা, বগুড়ায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা, জয়পুরহাটে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা, নওগাঁয় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা এবং সিরাজগঞ্জে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। ময়মনসিংহ : আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
ট্রেনের চলাচল শুরু হলেও যাত্রী নেই : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল (১ আগস্ট) থেকে স্বল্প দূরত্বে যাত্রীবাহী মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আন্তনগর ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও গতকাল ছিল না যাত্রীর চাপ। রেল সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৭টা থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন ছেড়ে গেলেও যাত্রী ছিল না বললেই চলে। এদিন সারা দেশে প্রায় ২০ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করেছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। তবে অন্য সময় এসব ট্রেনে পা রাখার জায়গা না পাওয়া গেলেও গতকাল ট্রেনগুলোর বগি ছিল ফাঁকা। যাত্রী না আসার ব্যাপারে রেলকর্মীরা বলছেন, ট্রেন চলাচলের বিষয়টি অনেকে জানেন না। আবার অনেকে ভয়েও ট্রেন এড়িয়ে চলতে পারে।