বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর পজিটিভ ভূমিকা চান সাবেক কর্মকর্তারা। আলোচনার মাধ্যমে দেশের চলমান সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, সর্বজনীন মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই আপনাদের সবাইকে নিজ দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। চোখের সামনে আমরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। দেশের বিদ্যমান অবস্থায় সংকট নিরসনে করণীয় প্রসঙ্গে গতকাল মহাখালীতে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এম. নূরুদ্দীন খান, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (বীরউত্তম), মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান (বীরপ্রতীক), মেজর জেনারেল (অব.) রেজাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ সাবেক সেনাকর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সংকটকে সামরিকীকরণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আমরা সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার সামরিক সরকারের এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত সম্পদশালী সেই দেশটিকে আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই শাসকদের গণহত্যার দায় নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই রাজনৈতিক সংকটকালে আমরা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি রাজপথ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সীমান্ত এই মুহূর্তে অরক্ষিত। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য সীমান্ত হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজিবি সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যে কোনো আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। অনুরোধ করে বলছি, এ সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না’। সংবাদ সম্মেলনে লে. জেনারেল (অব.) এম, নূরুউদ্দীন খান বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন আমি আশা করি তিনি জনগণের পক্ষে থাকবেন। আমি গত কয়েকদিনে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (বীরউত্তম) বলেন, সেনাবাহিনী দেশ রক্ষার্থে গঠন করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ গোলযোগে যখন সব বাহিনী ব্যর্থ হবে তখন সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে। গত কয়েকদিন আগে যে ঘটনা ঘটল এরই মধ্যে কী অন্য সব বাহিনী ব্যর্থ হয়ে গেছে। যদি ব্যর্থ হয় তাহলে এসব বাহিনীকে রাখার দরকার কী? মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান (বীরপ্রতীক) বলেন, পুলিশ নৃশংসভাবে শিক্ষার্থীদের হত্যা করছে। কি ফোর্স বানিয়েছি আমরা! এ রকম ঘটনা দেখছে সমগ্র বাংলাদেশ। এ রকম আমরা চাই না। আমি চাই, এ পরিস্থিতির যেন দ্রুত উত্তরণ ঘটে। সেনাবাহিনী যেন পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান বলেন, যখন রাস্তায় দেখি নিরীহ শিশু ও শিক্ষার্থীর তাজা রক্তে রাজপথ রক্তাক্ত হচ্ছে তখন নিজেকে অসহায় মনে হয়। কিছু করতে না পারার জন্য দুঃখিত। এ ক্রান্তিলগ্নে আমি চাই না এমন একটা পরিস্থিতি আসুক, সেনাবাহিনীকে জনতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। আমি চাই না রাজনৈতিক ইস্যুতে সেনাবাহিনী থাকুক। সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। তিনি বলেছেন, জনগণের সঙ্গে আছি। তাই আমি বলব, জনগণের সঙ্গে থাকুন, কিন্তু বন্দুকের নল তাদের দিকে তাক করে নয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আছি। কারণ, আমরা সবাই সেনাবাহিনী। আর যাদের সন্তানেরা আন্দোলন করছে, তার মধ্যে আমাদেরও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ছোট কর্মসূচি এখন বড় হয়ে গেছে। তবে আমাদের কাজ হচ্ছে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করা। কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের সঙ্গে জড়িত না হওয়া। এই সেনাবাহিনী অন্য সেনাবাহিনীর মতো নয়। কারণ, এই সেনাবাহিনীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে। আমরা চাই না সেনাবাহিনীর হাত কোনোভাবে রঞ্জিত হোক।