অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। গতকাল রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে বেড়েছিল যানবাহনের চাপ। এর মধ্যে সড়কে যানবাহান চলাচলের চাপ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়লেও ছাত্ররা সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় এখনো তৎপর রয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কের পাশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এখনো তাদের কাজ থেমে নেই।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির কারণে ঘটেছে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা। সে সময় দেশজুড়ে জারি করা কারফিউতে বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থগিত হয়েছিল চলমান এইচএসসি পরীক্ষা, বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, শেয়ার বাজার, দোকানপাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে আন্দোলনের জেরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তা ও পুলিশের সংস্কারের জন্য কর্মবিরতিতে যান ট্রাফিকসহ গোটা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এই সংকটকালে ট্রাফিক পুলিশবিহীন সড়কে যান চলাচলের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। টানা ছয় দিন রাত-দিন বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে শিক্ষার্থীরা সফলভাবে সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। চারদিকে প্রশংসিত হন তারা। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে থানা ও সড়কে ফিরতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। ট্রাফিক পুলিশ আবার সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজ দায়িত্ব পালন শুরু করলেও এখনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এই সংখ্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে। গতকালও ঢাকার মিরপুর-১২, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল এলাকায় শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, যত দিন সড়কে পুরোপুরিভাবে শৃঙ্খলা ফিরে না আসবে, তত দিন তারা স্বেচ্ছায় এ কাজ করতে আগ্রহী।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছে জনজীবন। চলছে অফিস, আদালত। ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। শিল্প-কারখানার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। সড়ক-মহাসড়কে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে যান চলাচল। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই জনমনে ফিরে আসতে শুরু করেছে স্বস্তি। এরই মধ্যে খুলতে শুরু করেছে ঢাকার বিভিন্ন দোকানপাট, শপিং মল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বেচাবিক্রিও শুরু হয়েছে। খুলেছে হোটেল-রেস্টুরেন্টও। ঢাকার পোশাক কারখানাগুলো আবারও আগের চেহারায় ফিরে গিয়েছে। পোশাক শ্রমিকরা তাদের আগের কর্মঘণ্টা মেনে কাজ শুরু করেছেন। সকাল থেকেই নগরীর প্রধান সড়কে অফিসগামী যাত্রীর চাপ দেখা যাচ্ছে। তবে মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিলগামী যাত্রীরা কিছুটা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তারা দ্রুত মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় আছেন।
জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও খুলতে শুরু করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রেপ-২ তে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ওয়ালী ফারুক গতকাল তার মামার সঙ্গে স্কুলে এসেছিল। ওয়ালির মামা সামিন জানান, ‘দীর্ঘদিন পর আজ স্কুল খুলেছে। এত দিন কিছুটা ভয় কাজ করলেও এখন থেকে নিয়মিত ভাগনেকে স্কুলে নিয়ে আসব।’
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার নাপিত ফয়সাল মোহাম্মদ দুই সপ্তাহ ধরে সেলুন বন্ধ রেখেছিলেন। গত সোমবার গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে সেলুন খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘মারামারি আর কারফিউয়ের কারণে এই কয়দিন সেলুন বন্ধ রাখছিলাম।’ কিছুটা আর্থিক কষ্ট হলেও আবার নতুন করে সব শুরু করতে চান তিনি।
তবে ঢাকার সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে এলেও শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে তারা যে হাতে রংতুলি ধরেছেন তা কিন্তু থেমে নেই। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এই শিক্ষার্থীরা এখনো শহরের দেয়ালগুলো গ্রাফিতি, স্লোগান এবং বিভিন্ন চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলছেন। এই শিক্ষার্থীরা নিজেরাই রং-তুলি জোগাড় করে তাদের প্রাণের শহরকে বিভিন্ন রঙে রঙিন করে তুলছেন।