ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেছেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী দুঃশাসন দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, নির্বাচনকে করেছে নির্বাসিত। ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতিকে করেছে বিপর্যস্ত। বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক মুক্তি এবং রাষ্ট্রের সব অসংগতি দূর করে দুর্নীতি দুঃশাসনমুক্ত উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন এখন সময়ের দাবি। ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য আন্তরিকভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইসলামী আন্দোলনের আমির আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি না মেনে খুনি হাসিনা সরকার নির্বিচারে ঠান্ডা মাথায় পাখির মতো গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। খুনি হাসিনাসহ সব হত্যাকারী, বিদেশে অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা করছে দেশবাসী। বিগত জালেম সরকারের নির্বাচন কমিশনে জড়িতদের বিচার করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। দেশের সংখ্যালঘুদের জানমাল ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা দেওয়া ইমানি দায়িত্ব। তিনি নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সব উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে নতুন সরকারের সব ভালো কাজের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, সবাই মিলে রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি এও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ছয় মাসের বেশি হতে পারবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে সংঘটিত সব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্তসাপেক্ষে আহত-নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তদন্তসাপেক্ষে ১৬ বছরে দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সব দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে। বিগত তিনটি নির্বাচন বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী দুঃশাসনের গত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ দেশের সাধারণ শিক্ষা খাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও ওলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ওলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ইমান-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারে ওলামায়ে কেরামদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।