রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিয়ষক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। তবে জীবনের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নিয়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে চায় রোহিঙ্গারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, চীনের বাংলাদেশ এম্বাসি ও ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যার আয়োজক থাকবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সমন্বয় করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী মাসের সুবিধাজনক তারিখে বৈঠকটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রধান উপদষ্টো ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে একটি কর্মকৈৗশলও নির্ধারণ করা হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সর্বাত্মক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রণয়নের কাজ চলছে। যা আগামী মাসের শুরুতে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে।
অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীন তাদের নীতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুরোধ জানাবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জীবনধারণ স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের আর্থিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও অর্থ বিভাগের বিভিন্ন নথিপত্রের তথ্যমতে, প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের জীবনধারণের জন্য জাতিসংঘ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীরা আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছিল। কিন্তু করোনা মহামারি, বৈশ্বিক সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। যার ফলে রোহিঙ্গা নাগরিকরা নিজেদের চাহিদা মেটাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে চলে আসছে। কাজের খোঁজে তারা চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা ঢাকায় এমনকি ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে দেশের বাইরেও চলে যাচ্ছে; যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা আমাদের কূটনৈতিক নীতির ওপর নির্ভরশীল। আমরা কূটনৈতিকভাবে যদি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি এবং একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে হবে।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আর দীর্ঘায়িত করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে রোহিঙ্গারা। এরপর সাত বছরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।