আগামীতে রাষ্ট্রীয় খরচে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনায় যত্রতত্র নামকরণ করা যাবে না। এ ধরনের কঠিন নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি খরচে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণে আইনি কাঠামোর জন্য চার সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মতি মিললে গঠিত কমিটি নীতিমালা প্রণয়নে কাজ শুরু করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। এতে সদস্য হিসেবে থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওই উপদেষ্টা কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে থাকলেই জনগণের করের টাকায় প্রতিষ্ঠিত সরকারি স্থাপনায় ব্যক্তির নাম বসিয়ে দেওয়া হয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয় না সেসময়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের তুষ্ট করতে দলীয় প্রতিষ্ঠাতা বা দলীয় প্রধানের ছবিসহ নামফলক লাগিয়ে দেন। এতে একই নামে একাধিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। দেখা যায়, যতগুলো স্থাপনা তৈরি বা নির্মাণ করা হয় সবই একই ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যদের নাম বসে যায়। এ নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক সমালোচনা হলেও সরকার পক্ষের কেউ তা নিয়ে কর্ণপাত করেন না।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বিপরীত রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করলেও আগের সব স্থাপনা মুছে বা অপসারণ করে ফেলেন। সেখানে বর্তমান দলীয় প্রধান বা পছন্দের ব্যক্তির নাম বসানো শুরু করেন। এসব নানা প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হয় বলে মনে করছেন সরকারি আমলারা। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু চাটুকার ও দলবাজ আমলা বাড়তি সুবিধার জন্য এসব নামকরণ করতে গিয়ে রাজনৈতিক নাম প্রস্তাব করেন, যা অপেশাদার আচরণ। অনেক সময় রাজনৈতিক সরকারের চাপও থাকে। সে ক্ষেত্রে এসব নিয়ে নীতিমালা দরকার। জানা গেছে, আগামীতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা ও অপচয় রোধে স্থাপনায় কোনো নাম বসাতে চাইলে নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা কমিটি এসব নিয়ে কাজ করবেন। এর আগে গত ২২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়েকটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় বিষয়টি আসে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটির ৩২তম সভায় দেশে যত হাইটেকপার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার রয়েছে, সেগুলোর নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্ব স্ব জেলার নামে এসব প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হবে। ফলে এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম আর থাকছে না হাইটেকপার্কগুলোতে। ২২ আগস্ট সরকারি স্থাপনার নামকরণের ক্ষেত্রে একটি আইনি কাঠামো হয় বলে জানিয়েছিলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি আরও বলেন, জনগণের অর্থ ব্যয় করে কোনো প্রকল্প হলে তার নামকরণ কী নীতি অনুসরণ করে করা হবে, সেটার বিষয়ে সরকার কাজ করবে। একটা পর্যায়ে এটাকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যেই আনতে হবে। যাতে জনগণের টাকায় যেটা হবে, তা যেন জনমতের প্রতিফলন ঘটে। এটা এমন কোনো নামকরণ না হয়, যা ফ্যাসিবাদকে উসকে দিতে না পারে। নামকরণের নীতিমালা হতে পারে, আইনও হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।