রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুম করার অভিযোগে আট বছর পর আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তার স্ত্রী। মামলায় ২০১৬ সালে র্যাব-৫-এর রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পে কর্মরত সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা আমলি আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নাইস খাতুন (৩০) নামে এক নারী। নাইসের অভিযোগ, তার স্বামী স্বর্ণ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনকে (৩৫) তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করেছে র্যাব।
গুম হওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ীর আলীপুর গ্রামে। গোদাগাড়ী বাজারে তার স্বর্ণের দোকান ছিল। আদালত গতকাল বাদীর আবেদনটি পুলিশের বিশেষ শাখাকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার আবেদনে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন র্যাব-৫-এর তৎকালীন রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান, এসআই দেবব্রত মজুমদার, দুলাল মিয়া, এএসআই কামাল হোসেন, ল্যান্স নায়েক মাহিনুর খাতুন, সিপাহি কহিনুর বেগম ও কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম।
নাইস খাতুনের আইনজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, বুধবার আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত বাদীর বক্তব্য শুনেছেন। ওইদিন আদেশ দেননি। গতকাল সকালে আদালতের বিচারক লিটন হোসেন বাদীর আবেদনটি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। নাইস খাতুন জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার স্বামী ইসমাইল হোসেন (৩৫) দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছালে র্যাব সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যান। তিন দিন পর ইসমাইল অন্য এক ব্যক্তির মোবাইল নম্বর থেকে কল করে পরিবারকে জানান, তিনি র্যাবের হেফাজতে আছেন। নাইস আরও জানান, র্যাব সদস্যরা যখন ইসমাইলকে তুলে নিয়ে যান তখন অনেকেই দেখেছেন। এ ছাড়া মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তি র্যাব ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় সেখানে ইসমাইল হোসেনকে দেখেছেন। ইসমাইল র্যাব হেফাজতে আছেন জেনে তারা ওই সময় র্যাব-৫-এর অধিনায়কের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। নাইস জানান, র্যাব ক্যাম্পে থাকা যে দুই ব্যক্তি ইসমাইলকে দেখেন এবং যারা তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন তাদের সাক্ষী করা হচ্ছে। নাইস আশঙ্কা করছেন, র্যাব সদস্যরা তার স্বামীকে তুলে নেওয়ার পর হত্যা করে লাশ গুম করেছেন। এতদিন র্যাবের ভয়ে তিনি মামলা করতে পারেননি। এখন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তিনি মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। তাই তিনি আদালতে এ মামলা করছেন।
ইসমাইল হোসেনের পরিবার এতদিন মনে করতেন, কথিত আয়নাঘরে ইসমাইলকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাই আওয়ামী সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে কেউ কেউ ফিরে এলে ইসমাইল হোসেনের ছোট ভাই ইউসুফ আলীও ঢাকায় ছুটে যান। গুমের শিকার অন্যদের স্বজনদের সঙ্গে তিনি কয়েক দিন ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করেন কথিত আয়নাঘরের সামনে। ইসমাইলের ছোট দুই সন্তানও অপেক্ষায় থাকেন বাবার। কিন্তু ইসমাইলকে ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হয়েছে ইউসুফকে। এর পরই মামলার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারটি।