বন্যাদুর্গত এলাকায় বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭১ এ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এর আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের সমন্বয়ক, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইওএম চিফ অব মিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনআরসিও হিউম্যান্টেরিয়ান অ্যাফেয়ার অ্যাডভাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা। পুনর্বাসনে সহায়তার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে এসেছে জানিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, আজ ইউএন (জাতিসংঘ) বডির আটটি নানা রকমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করেছি। তারা পুনর্বাসন কাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বন্যার সময় সেনাবাহিনী ও জনগণের উদ্দীপনা, ত্রাণ কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবা এবং অভূতপূর্ব সহযোগিতার জন্য দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা প্রশংসা করেছেন।
ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বন্যার ত্রাণ পর্যায়টা অতিক্রম করে পুনর্বাসন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ খুব দ্রুত চলছে। মাঠপর্যায় থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর কোন কোন বিষয়ে তারা সহযোগিতা দিতে পারেন সেটা আমরা নির্ণয় করে দিলে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত আশাবাদী যে, আমরা দুর্যোগ যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় অতিক্রম করতে পেরেছি, আমরা ভবিষ্যতে পুনর্বাসন কর্মসূচিও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। উপদেষ্টা বলেন, ডি-ফরমের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয়। আমরা সেটি এক সপ্তাহের মধ্যে করতে বলেছি।
এ সময় ব্রিফিংয়ে কর্মকর্তারা জানান, দেশের ১১টি জেলায় বন্যায় এখন পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু এবং ৫০ লাখ ২৪ হাজার ২০২ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪৫, নারী সাত এবং শিশু ১৯। কুমিল্লায় ১৯, ফেনীতে ২৮, চট্টগ্রামে ছয়, খাগড়াছড়িতে এক, নোয়াখালীতে ১১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক, কক্সবাজারে তিন এবং মৌলভীবাজারে একজন মারা গেছেন। মৌলভীবাজারে এখনো নিখোঁজ আছেন একজন। দেশের ৬৮টি উপজেলা বন্যাকবলিত, ৫০৪টি ইউনিয়ন-পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয়দানের জন্য ৩ হাজার ৬১২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা আছে এবং বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৬ জন এবং ৩১ হাজার ২০৩টি গবাদি পশু রয়েছে। এ ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা প্রদানে বর্তমানে ৪৬৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
লক্ষ্মীপুর : বন্যায় লক্ষ্মীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ কৃষক। আমন ধান রোপণের মৌসুমে বন্যায় নষ্ট হয়েছে ৫০ শতাংশ ফসলি জমি। সোনালি আউশও নষ্ট প্রায় ৩০ শতাংশ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, কৃষি খাতে ২২৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। প্রণোদনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদপ্তর।
ফেনী : ফেনী জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝে ও খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে আট গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। এসব রোগী এজমা, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।