সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার গুলিবিদ্ধ লাশ ভ্যানে স্তূপ করে রেখে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার খবরে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন নৃশংস ঘটনার গোপনে ধারণকরা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে পুলিশের প্রতি জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে থাকা ঢাকা জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের চার সদস্য প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। এই ঘটনার ‘নির্দেশদাতা’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবদুল্লাহিল কাফীকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, ভাইরাল ভিডিওর প্রথম অংশে লাশের স্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পুলিশের ভেস্ট ও হেলমেট পরিহিত ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার বাড়ি বরিশালের হিজলায়। পাশেই হেঁটে যাওয়া (মুখে হালকা দাড়ি) ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল করিম। ভিডিওর শেষাংশে থাকা হাতে হেলমেট ও পুলিশের ভেস্ট পরিহিত আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও তার সামনে কচুপাতা রঙয়ের গেঞ্জি পরা (থানার ভেস্ট পরিহিত) কনস্টেবল মুকুল বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। ভিডিওতে প্রদর্শিত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় কর্মরত কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযুক্তদের শনাক্ত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভিডিওতে থাকা ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল করিম, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল বলে জানিয়েছেন। অবশ্য সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমার কোনো অস্ত্র নাই। ভিডিওতে থাকা ওই ব্যক্তি আমি নই।’
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হত্যায় জড়িত কয়েকজন শনাক্তও হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ৩০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপের ভিডিও ভাইরাল হয়। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা চ্যাংদোলা করে ভ্যানে লাশ উঠাচ্ছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে দেখা যায়। ভিডিওর প্রদর্শিত একটি পোস্টার দেখা যায়। যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার সামনে।
এদিকে, আশুলিয়া থানার লাশ পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফীকে আটক করেছে ডিবি। সোমবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি দল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি ড্রোন উড়িয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তবে সেটি পুলিশের ড্রোন কি না তা জানি না। থানার বিভিন্ন গলিতে ছাত্র-জনতা প্রবেশ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশ লাশগুলো থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশভ্যানে লাশগুলো রেখে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সেদিন ‘ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফীর নির্দেশনা পালন করেছি। জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ায় ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে ৫ শতাধিক মানুষ। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।