দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিন্ডিকেটের প্রভাব না থাকায় নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছিল। এখন সিন্ডিকেটে হাতবদল হয়েছে। আগের মতোই পণ্য বহনকারী ট্রাককে চাঁদা দিতে হচ্ছে। দোকানে দোকানে আগের মতোই চাঁদাবাজি হচ্ছে। যার ফলে আগের মতোই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে চাল, ডিম আলুসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আগের মতোই সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে। এ ছাড়া হাতবদলে রাজধানীতে শাকসবজি দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রল করা না গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানীতে একটি কৃষিপণ্য নিয়ে আসতে কয়েক জায়গায় আগের মতোই টাকা দেওয়া লাগে। এ ছাড়া বাজারগুলোতে আগের মতোই চাঁদা দেওয়া লাগে। এতে পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া বাজারে পণ্য এলে আবার মোবাইলে বার্তার মাধ্যমে অন্যদের মাঝে বাড়তি দাম জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে যদি একটি লাউ ১৫ টাকা হয় রাজধানীতে সেই একই লাউ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদনস্থলের দামের চেয়ে ঢাকার বাজারে দামের অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
?কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগে থেকেও এখন বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের অন্যান্য সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সরকার শুল্ক কমানোর ঘোষণাতেও বাজারে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ক্রেতাদের আগের দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। চালের দাম এখন বাড়ার কথা নয়। অথচ বাজারে কোনো কোনো চালের দাম ৮ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। এতে বোঝা যায় বাজার সিন্ডিকেট কতটা বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চাল, আলু ও ডিম অন্যতম। এসব পণ্য ঘিরেই তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। যা আগের মতো এখনো রয়েছে। এসব সিন্ডিকেট কৌশলে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা। কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দাম হাতের নাগালে না থাকায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একটি ডিম উৎপাদন খরচ হয় ৮ টাকা ৮১ পয়সা। বর্তমানে বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকার ওপরে। মোবাইলে খুদে বার্তার মাধ্যমে ডিমের বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণ হয়। বাজারে প্রতি কেজি আলু এখনো ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পরও এ পণ্যের দাম কোনোভাবেই কমানো যায়নি। অথচ সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ১৯ পয়সা। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ২৯ টাকা। অথচ সিন্ডিকেটের কারণে দুই গুণের বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে এ পণ্যটি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ উৎপাদন খরচ হয় ৩৪ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকার বেশি। আমদানিতেও পিঁয়াজের দাম কমানো যায়নি। সরকারের তালিকা অনুযায়ী গরুর মাংসের দাম হওয়ার কথা ৬৬৫ টাকা কেজি। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত কয়েকদিনে সিন্ডিকেট করে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশে ধান-চালের সংকট না থাকলেও বাড়ছে চালের দাম। বাবুবাজার চাল বিক্রেতা মেসার্স ভুইয়া রাইস এজেন্সির মালিক মো বরকত সোহেল বলেন, মিল থেকেই বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কম দামে কিনতে পারলে আমরাও কমে বিক্রি করব। গত কয়েকদিনে শুধু মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর রামপুরা, ভাটারা ও খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এসব ডিম বিক্রি হতো ১৫০ টাকায়। আর সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। এ ছাড়া জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ২৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ১৫ থেকে ৩০ টাকা, ধনেপাতা কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। বাজারগুলোতে লালশাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালংশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা ও ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পিঁয়াজ ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা ও আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।