পরিস্থিতি পাল্টালেও এখনো অস্থিরতা কাটেনি শেয়ারবাজারে। কয়েক বছর ধরে নানা অনিয়মের কারণে অস্থির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। প্রতিদিন কমছে সূচক। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শুরুতে কয়েকদিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন হলেও এখন আবারও পেছনের দিকেই হাঁটছে। ফলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। পুঁজি হারিয়ে তারা দিশেহারা। একই পরিস্থিতিতে পড়েছে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে শেয়ারবাজারে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার পুরনো পথেই হাঁটছে। নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে প্রতিদিন দরপতন হচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরে টানা পতন শেয়ারবাজার তলানির দিকে যাচ্ছে। চরম বিপর্যয়ে বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। গত এপ্রিল থেকে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। তবে ৫ আগস্টের পর বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ৩০০ কোটি টাকার নিত্য লেনদেন দুই হাজার কোটিতে পৌঁছায়। এরপর নতুন সরকার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করে। এরপর কয়েকদিন বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ধরে রাখা যায়নি। এখন ফের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বোর্ড পুনর্গঠন নিয়ে ডিএসই সদস্যদের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাজারের নানা অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কমিটি নিয়েই আপত্তি তোলেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বাজারে আস্থা ফেরার পরিবর্তে উল্টো অস্থির হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি পাল্টালে বাজার সূচক যেখান ৫ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে পৌঁছায়। তদন্ত কমিটি গঠনের পর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৭২৮ পয়েন্টে নেমেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে প্রায় প্রতিদিন দরপতন হয়েছে। কেউ আস্থা পাচ্ছে না শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে। গত সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে এক সপ্তাহের লেনদেনে ১০১ পয়েন্ট সূচক কমেছে। অর্থাৎ পাঁচদিনের লেনদেনে চারদিনই সূচক কমে। এ সময়ে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন যেখানে ৭ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা ছিল। সর্বশেষ সেখানে হয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কিছু কাজ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা যেটা দেখলাম তারা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারেনি। বাজার স্থিতিশীলের জন্য তারা যেসব পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল সেটা না নিয়ে অনেকটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কাজ করেছে। এ কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে কোনো মেনুপুলেটর নেই। কোনো সিন্ডিকেট নেই। যারা এতদিন নানা অনিয়ম জালিয়াতি করেছে তারা অনুপস্থিত। তবে এখন কেন বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না? এর উত্তর নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিতে হবে। নতুন কমিশন গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন কয়েক ব্যক্তি এসেছেন শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে। তারা যা করছে আগের কমিশন একই কাজ করেছে। তাহলে কি পরিবর্তন হলো? তারা একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এই কমিটি বাজারে কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না। উল্টো বাজারকে আরও অস্থির করে তুলছে।