পটুয়াখালী ও ময়মনসিংহে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পরিবারের মাঝে বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে পটুয়াখালীর রায়হানের পরিবার অন্যতম। কারণ রায়হানকে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল মা-বাবার। নিজেদের বৃদ্ধ বয়সে সংসারের হাল ধরবে ছেলে-এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। তাদের সেই স্বপ্ন গুলিতে বিদ্ধ হয়ে অকালেই ঝরে যায়। ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডায় গণমিছিলে যোগ দিয়েছিল পটুয়াখালীর রায়হান। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়। এ রায়হানের পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে ও খাদ্যসহায়তা নিয়ে সম্প্রতি তার বাড়িতে যান বসুন্ধরা শুভসংঘ পটুয়াখালী জেলা শাখার বন্ধুরা। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের জন্য এক মাসের খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেন তারা। পরবর্তী সময়ে এ পরিবারটির পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ থাকবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়ার রায়হানদের বাড়িতে অনেক পথ কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। চালের বস্তা কাঁধে নিয়ে কাদা মাখানো পথ তোয়াক্কা করেননি বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা। মানবিক সহায়তা নিয়ে তারা যথারীতি হাজির হয়েছিলেন নিহত রায়হানের বাড়িতে। এ ছাড়া গলাচিপা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে চরকাজল সোমবাড়িয়া বাজারে ছিল আরেক পরিবার। বাজার থেকে একটি ফসলের খেতের মধ্যে চারদিকে পানি আর মাঝখানে মাটির ভিটিতে টিনের চৌচালা একটি ঘর রয়েছে পরিবারটির। এ ঘরে বসবাস করতেন ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত মো. রাসেল মাহমুদ। ঢাকার কেরানীগঞ্জের সোনারগাঁও কলেজের ছাত্র ছিলেন রাসেল। পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়ার জন্য কাঁচামাল বিক্রি করতেন। আশা ছিল পড়াশোনার পর একটা চাকরি করবেন। নিজেকে করবেন স্বাবলম্বী। কিন্তু তার সে আশা বুলেটের সঙ্গে মিশে যায়।
৬ আগস্ট বাবা আবু সালেহ মর্গ থেকে রাসেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি গলাচিপার চরকাজলের ছোট চরশিবা গ্রামের বাড়িতে ঈদগাহসংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করেন। এর পর থেকে পরিবারটিতে চলছে মাতম। ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা শোকে পাথর হয়ে আছেন। ভাই হারিয়ে ভাইয়েরা হয়ে গেছেন একেবারেই চুপচাপ। শোকার্ত এ পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা। সম্প্রতি এক মাসের খাদ্যসহায়তা নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। এ সহায়তা তুলে দিয়ে পরবর্তী সময়ে দরিদ্র এ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। নিহত রাসেলেন নানা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ অসহায় এ পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা আশা করব এভাবেই অসহায়দের পাশে থাকবে বসুন্ধরা শুভসংঘ।’ এদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত কৃষক সাইফুল ইসলামের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সম্প্রতি উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়েনের চকঢাকিরকান্দা গ্রামের বাড়িতে নিহতের পরিবারের কাছে উপহারগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ সময় সাইফুলের স্ত্রী রহিমা আক্তার, ছোট দুই শিশুসহ পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। পরিবারটির এক মাস খাওয়ার মতো চাল, তেল, চিনি, ডাল, শিশুদের জন্য দুধ ও নুডলস নিয়ে নিহত সাইফুলের বাড়িতে হাজির হন বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা।
২০ জুলাই দুপুরে ফুলপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আমুয়াকান্দা বাজার এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হলে হঠাৎ একটি গুলি সাইফুলের ডান চোখের ওপরে লেগে মাথা ছিদ্র হয়ে বেরিয়ে যায়। ফুলপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাইফুলের পরিবার জানায়, একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন সাইফুল। একটি জরাজীর্ণ ঘর রয়েছে। দুই শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত পরিবার। স্বামীহারা রহিমা বলেন, ‘আমগ্যোর ঘর নেই, দুই শিশুসন্তান নিয়ে কীভাবে চলাফেরা করমু আল্লাই জানেন। দুই শিশুর জন্য ধান বিক্রি করে আম নিয়ে বাড়িতে আসার আগেই আমার স্বামীর প্রাণ গেল গুলিতে। এখন কীভাবে সামনের দিনগুলো চলব বুজতাছি না।’ এ সময় বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে এ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন উপস্থিত সবাই। বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল আমিন, আবদুল মান্নান, শাহ নাফিউল্লাহ সৈকত প্রমুখ।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরা আজমপুর রেললাইনের পাশে আমিরুল ইসলামের (৪৫) চোখে গুলি লেগে ঘাড় দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। এতে তার মৃত্যু হয়। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। পাশাপাশি ফুটপাতে ফল বিক্রি করতেন। আমিরুলের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সলিমপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান মেয়ে তুহা (৪), তুষা (২), ছেলে তুষার (এক বছর)। নিহত এ ব্যক্তির অবুঝ তিন শিশু ও পরিবারের সদস্যদের খাদ্যসহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সম্প্রতি বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তার পরিবারের জন্য এক মাসের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হন বসুন্ধরা শুভসংঘ ত্রিশাল উপজেলার বন্ধুরা। ছোট্ট শিশুদের জন্য দুধসহ পুরো মাসের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে আমিরুলের পরিবারকে। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রী নিহতের স্ত্রীর হাতে তুলে দেন ত্রিশাল বার্তা পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক শামীম আজাদ আনোয়ার, ত্রিশাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি খোরশিদুল আলম মজিব, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জোবায়ের হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, দৈনিক ঈশিকা প্রতিনিধি নুরুল আমীন, দৈনিক গণমুক্তির প্রতিনিধি কবি মাসুদ রানা, দৈনিক কালবেলা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল ফাহাদসহ শুভসংঘের বন্ধুরা। নিহত আমিরুলের স্ত্রী তানজিন আক্তার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার পরিবারের কেউ খোঁজ নেয়নি। আপনারা যারা আমার এতিম অবুঝ শিশুদের খোঁজ নিতে এসেছেন তাদের প্রতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’