উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদী-তীরবর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১৫টি চরগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলের শতাধিক পরিবার, গ্রামীণ কাঁচা সড়কসহ ১৫৯ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং মৌসুমি ফসলের খেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নীলফামারী : টানা বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে নীলফামারীতে বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা নদীর পানি। গতকাল সকাল ৬টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকাল ৯টায় তিন সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। এসব গ্রামের ৫ সহস্রাধিক মানুষের বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন এসব নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ সহস্রাধিক মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজারে সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নদীর পানি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেজবাহুর রহমান বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরির কথা বলা হয়েছে।
রংপুর : রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খেতের আমন ধান, মরিচ, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। স্থানীয়দের মতে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কাউনিয়া উপজেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢুষমারা, তালুক শাহবাজ, পূর্ব নিজপাড়ার অংশ, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চরপ্রাণনাথ, শনশনিয়া, চরহয়বতখাঁ, চরগনাই, আজমখাঁর চর ও নতুন করে চরনাজিরদহ ও নাজিরদহ গ্রামের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে প্রায় ১ হাজার পরিবার।
কুড়িগ্রাম : তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তিস্তা নদীর কাউনিয়া রেল সেতু পয়েন্টে। জেলার রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলের শতাধিক পরিবার, গ্রামীণ কাঁচা সড়কসহ ১৫৯ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং মৌসুমি ফসলের খেত ডুবে গেছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
লালমনিরহাট : উজানে ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তার নিম্নাঞ্চল। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, আকস্মিক বন্যায় জেলায় অন্তত ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।