ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলনরত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ইটপাটকেল, কাঁদানে গ্যাস ও পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ও সাভারের হেমায়েতপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে আন্দোলনের মুখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের টঙ্গাবাড়ী, জিরাবো, কাঠগড়া, পুকুরপাড়, ও জামগড়া এলাকার অন্তত ৬৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত এনভয় গার্মেন্টের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়ার পরিচয় জানা গেলেও অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সকাল ৮টার দিকে কাজে যোগদানের পরপরই কারখানার ভিতরে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। এ সময় কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা সড়কে বের হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে ১০টার দিকে ফের সড়ক অবরোধ এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
৬ হাজার আসামি : গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়া থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনায় অজ্ঞাত ৬ হাজার জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে আশুলিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আউয়াল হোসেন রানা। গতকাল মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বিকালে অজ্ঞাত আসামিরা থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে।
এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। পরে থানা প্রাঙ্গণে থাকা মামলায় জব্দকৃত আলামত একটি প্রাইভেটকারসহ দুটি গাড়ি ও থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ সব রেজিস্ট্রার আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার মালখানায় রক্ষিত চলমান এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নিচতলায় অস্ত্রাগারে রক্ষিত প্রশ্নপত্র আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিকাশ এজেন্টের রক্ষিত টাকার সিন্দুক ভেঙে বিনষ্ট করে লুটপাট চালায় আসামিরা। মামলায় আরও বলা হয়, এ ঘটনার পরদিন স্বার্থন্বেষী দুষ্কৃতকারীরা থানার আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাসরত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে বাসায় বাসায় গিয়ে খোঁজাখুজি করে। পরে পুনরায় থানায় এসে একইভাবে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে উল্লাস করে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার মূল্যবান মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে।