যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, খেলোয়াড় সাকিবকে নিয়ে কারও কোনো সমস্যা নেই। তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিবের নিরাপত্তা চাওয়া অবান্তর। গতকাল সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে গ্রামীণফোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং চেক গ্রহণ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আলোচনা চলছে, উনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন, সরকারের অবস্থান কী? এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বিসিবি এ বিষয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছে। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে বাধ্য এবং সেটা আমরা অবশ্যই করব। তিনি বলেন, এখানে সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুইটা। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। খেলোয়াড় হিসেবে একটা পরিচয়, আরেকটা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়। উনি আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে এমপি নির্বাচন করেছেন। মানুষের মধ্যে তো দুটো নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এখন খেলোয়াড় হিসেবে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সেটা অবশ্যই আমরা দেব। দেশে এলে আমরা সেটা দেব। তার নামে যে হত্যা মামলাটা হয়েছে, এটার বিষয়ে আমরা বলেছি, আইন মন্ত্রণালয়ও বলেছে, সংশ্লিষ্টতা না থাকলে প্রাথমিকভাবেই বাদ দেওয়া যায় বলেন আসিফ মাহমুদ। উপদেষ্টা বলেন, খেলোয়াড় সাকিবের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আছে। তবে, ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে জনমনে তৈরি হওয়া ক্রোধের বিপরীতে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা চাওয়া অবান্তর। উদাহরণ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মনে করেন আমার নিরাপত্তার জন্য পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন গানম্যান থাকে। আমার ওপরে যদি দেশের ১৬ কোটি জনগণের, ১০ কোটি জনগণের যদি ক্ষোভ থাকে তাহলে এই ৫-৬ জন আমাকে কী নিরাপত্তা দেবে? সেক্ষেত্রে জনগণের যদি কোথাও ক্ষোভ থাকে তাহলে সেটাও আমাকে রিডিউস (কমাতে) করতে হবে আমার কথা দিয়ে।
উপদেষ্টা বলেন, আমার মনে হয় উনাকে (সাকিব আল হাসান) উনার জায়গাটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, রাজনৈতিক জায়গা থেকে। উনার যে রাজনৈতিক অবস্থান সেটা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। অলরেডি মাশরাফি বিন মর্তুজা কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটা কেউ কাউকে আসলে দিতে পারবে না। শেখ হাসিনাকেও নিরাপত্তা দেওয়া যায়নি, তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সে জায়গায় রাজনৈতিক বিষয়টা, পরিচয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। তিনি বলেন, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব এবং সেটি আমরা পালন করি। শ্রমিক কল্যাণ তহবিল নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ আরও বলেন, যারা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে লভ্যাংশের নির্ধারিত অংশ দিচ্ছেন না, তাদের এর আওতাভুক্ত করা হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে তহবিল থেকে শ্রমিকদেরকে সহায়তা দেওয়া হবে। শ্রমিকদের দাবি অনুসারে তাদের সব সমস্যার সমাধানও করা হবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে। তবে যারা আইন ভেঙে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি। গ্রামীণফোন লিমিটেড তাদের গত এক বছরের লভ্যাংশের দশমিক ৫ শতাংশ হিসেবে, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ২৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪২ টাকা দিয়েছে। আর শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে এ পর্যন্ত জমা রয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ৪৪০টি কোম্পানি শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে লভ্যাংশের নির্ধারিত অংশ নিয়মিত দিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার আগে নিশ্চয়তা চেয়েছেন, বাংলাদেশে সিরিজ খেলে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারবেন পরিবারের কাছে। পরে বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিসিবির পক্ষে সম্ভব নয়, এটি বিসিবির কাজও নয়। নিরাপত্তার বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের হাতে।