সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সেই সঙ্গে এসব ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পৃথক নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাটি। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও তাঁর স্ত্রী সিতারা আলমগীর এবং তাদের ছেলে জয় আলমগীরের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ থাকবে। মহীউদ্দীন খান আলোচিত ফারমার্স (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর আমলে ব্যাংকটিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়। এ কারণে আওয়ামী লীগের আমলেই চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তবে তাঁর কোনো শাস্তি হয়নি। তার অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি এখনো তারল্য সংকটে ভুগছে। গ্রাহকরা তাদের রক্ষিত টাকা চাহিদামতো ফেরত পাচ্ছেন না।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের ব্যাংক হিসাব ও তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে হাবিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী ওয়াজেদ শামসুন্নাহার ও তাদের ছেলেমেয়ে এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হিসাবের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য জব্দ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁদের নামে কোনো লকার থাকলে তার ব্যবহারও ৩০ দিনের জন্য বন্ধ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, হাবিবুর রহমান পুলিশের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত ৭ আগস্ট হাবিবুর রহমানকে ডিএমপি কমিশনারের পদ থেকে বদলি করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট তাঁকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ঋণ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, তার বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। চিঠিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী আমিনুল ইসলাম, তার বাবা জাহান বকস মণ্ডল, মা আনোয়ারা বেগম, স্ত্রী ইসরাত জাহান, ছেলে এজাজ আবরার এবং মেয়ে আফরাত ইবনাথের ব্যক্তিগত হিসাব এবং তাদের মালিকানাধীন কোম্পানির নামে পরিচালিত হিসাবের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য জব্দ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তাও জব্দ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে তার তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করেছে সংস্থাটি। নাবিল গ্রুপ নিয়ম ভেঙে নামে-বেনামে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক হিসাব স্থগিতের চিঠিতে সবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উল্লিখিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবসংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, লেনদেন বিবরণীও বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।