সাড়ে তিন বছরের অধিক সময় আইনি লড়াইয়ের পর আদালত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে জয়ী ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনকে। দীর্ঘ এ আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার পর এ রায়কে তিনি দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাইলফলক হিসেবে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এ রায়কে দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাইলফলক হিসেবে মন্তব্য করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘নির্বাচনি কারচুপির অভিযোগ এনে বাংলাদেশে আমিই প্রথম নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে ইভিএমের বিরুদ্ধে মামলা করি। এ মামলা করার কয়েক দিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমার মা ও পরিবার-পরিজনকে নানামুখী চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু আমি আইনি লড়াইকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ছিলাম। সংকল্প করেছিলাম শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করব। আমার এ লড়াইয়ে দলের চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সাহস ও সমর্থন নিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ জন্য আমার দলের নেতা-কর্মী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে তিলে তিলে একটি সুন্দর শহরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। অপরিকল্পিত কর্মকান্ড যার প্রধান কারণ। শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করব। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করব।’
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতাকে গুরুত্ব দিতে চান কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়তে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খাল উদ্ধার করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করব। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে খাল ও ছড়া মুক্ত করে উভয় পাশ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করব। শহরের সব খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারসহ পানি চলাচলের উপযুক্ত করে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করব। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি মাটি পড়ে খাল ও নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে তা খালে গিয়ে পড়ে। যা নিরসনে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা করে আয়বর্ধক প্রকল্প বৃদ্ধিসহ বাস স্টপ নির্মাণ করা হবে। বন্ধ প্রতিষ্ঠানস চালু ও লাভজনক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সিটি করপোরেশনের বেদখল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবহেলিত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য বিভাগ। নগরের জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেলেও নতুন কোনো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় শয্যা সংখ্যার অপ্রতুলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে শিশু হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ট্রমা সেন্টারসহ বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে।