কিছুতেই স্বস্তি ফিরছে না লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে। সরকার তিন নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণের পর আরও বেড়েছে। ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম আগের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দাম কমানোর জন্য আলু ও পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। এসব কোনো কিছুরই প্রভাব নেই বাজারে। আগের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। ফলে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।
বাজারে ডিমের দাম সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি। প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৭০-১৮০ টাকা ও সাদা ডিম ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৬০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সর্বোচ্চ ১৮০, সোনালি মুরগি ২৭০ ও ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী খুচরায় ডিম বিক্রি হওয়ার কথা প্রতি পিস ১১ টাকা ৮৭ পয়সায়। অথচ খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে।
আলু ও পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরও বাজারে প্রতি কেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। পিঁয়াজ রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম দাম প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। দুটি ব্যবস্থাই কার্যকর হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব নেই। এ ছাড়া বাজারে আলুর দামও কমেনি। প্রতি কেজি আলু আগের মতো ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০-২৬০ টাকা ও আমদানির আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকা কেজি। তবে দেশি নতুন আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। সবজির বাজারে হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে দামটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। বাজারে শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা, ঢ্যাঁড়শসহ প্রায় সব ধরনের শীতের সবজি মিলছে। রয়েছে বেগুন, পটোল, ঝিঙা, করলা, টম্যাটো, শসা, গাজরসহ অন্যান্য সবজিও। সব সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম আগের চেয়ে বেশ চড়া। ফলে সবজির বাজারে এসে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, শালগম ১০০-১১০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকা ও কাঁচা পেঁপে ৩০ -৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। পিছিয়ে নেই শসা-গাজরের দামও। দেশি শসা ৮০-৯০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০-৭০ টাকা এবং মানভেদে গাজর ১০০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাব্বিরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রায় সব সবজির দাম ৫০-৬০ টাকার ওপরে। সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দামের বেলায় মনে হয় এগুলো দুষ্পাপ্য। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই এক-দেড় শ টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাব তারও উপায় নেই। মোটকথা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।
দেশের বাজারে চালের সংকট না থাকলেও স্বস্তি নেই দামে। ৫৪ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না মোটা চাল। সরু চালের দাম আরও চড়া। প্রতি কেজি মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। মানভেদে সরু চাল ৬৪ থেকে ৭৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সরকারি হিসাবেই, গত বছর একই সময়ের চেয়ে বাজারে চালের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। এ পরিস্থিতিতে ১৪ মাস পর চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিল ভারত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশটি থেকে চাল আমদানি করতে পারলে দেশের বাজারে দামেও প্রভাব পড়বে। ?কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের সংস্থাগুলো কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অনেক সময় দাম নির্ধারণকারী সংস্থাকেও বাজার তদারকিতে দেখা যায় না। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজারে এখনো চাঁদাবাজি হচ্ছে। কোথাও আগের থেকেও এখন বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। যার ফলে সরকার শুল্ক কমানোর ঘোষণাতেও বাজারে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ক্রেতাদের বেশি দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে।