পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের তিন সীমান্তবর্তী উপজেলা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে জেলা সদরের চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা। সেখানে অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে পানি মানুষের আবাসে ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি ও গ্রামীণ অবকাঠমোর পাকা সড়ক। প্রচণ্ড বৃষ্টি আর আসাম-মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে বেশকিছু দুর্গম স্থানে মানুষজন আটকা পড়েছেন।
জানা গেছে, ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর পানি উপচে গিয়ে রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, দিঘিরপাড় ও ডাকাবর প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে সদর বাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রামেরকুড়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন কয়েকটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে শত শত একর রোপা আমনের খেত ও অন্যান্য ফসলের মাঠ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের কয়েকটি গ্রামসহ ভাটি এলাকার কমপক্ষে ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। তবে পাহাড়ি ঢলের বিশেষত্ব হলো আর ভারী বর্ষণ না হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হবে। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এদিকে নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শহররক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। নন্নী, পোড়াগাঁ, কালাকুমা, রাজনগরসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বাসাবাড়িতে আটকা পড়ে আছে মানুষজন ও গবাদি পশু। অন্য সীমান্ত অঞ্চল শ্রীবরদী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঢলের পানি দেখা দিয়েছে। হঠাৎ পানি বাড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘আটকে পড়াদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। এখন উদ্ধার ও ত্রাণ পৌঁছানোই বড় চ্যালেঞ্জ। আপাতত ১ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণের কাজ চলছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসন ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যা করণীয় প্রশাসন সব করবে।’ নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গত রাতের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে নদীতীর উপচে গিয়ে প্রবল স্রোতে বসতবাড়িতে ঢলের পানি ঢুকছে। বিভিন্ন এলাকায় নদীতীর ভেঙে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী দিয়ে তীব্র বেগে ভারত থেকে আসছে পানি। এতে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া, নালিতাবাড়ী, মরিচপুরাণ, যোগানিয়া, বাঘবেড় নয়াবিল, পোড়াগাঁও ইউনিয়ন ও পৌরশহরে পানি প্রবেশ করছে। টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।