বর্তমান বিশ্বের মেয়ে ও নারীদের মধ্যে প্রতি আটজনে একজন ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার। বিশ্বে ৩৭ কোটির বেশি নারী ১৮ বছর হওয়ার আগেই ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নন-কন্টাক্ট বা সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া যৌন সহিংসতার হিসাবে এই সংখ্যা ৬৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। আগামী মাসে দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার বিষয়ে বিশ্ব মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন সামনে রেখে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ইউনিসেফ বলছে, এটিই বিশ্বব্যাপী যৌন সহিংসতার সমস্যা বিষয়ক প্রথম জরিপ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন সহিংসতা ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনীতি অনুসারে নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি অতিক্রম করে গেছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও যৌন হেনস্তার কবলে পড়েছে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের দেশগুলোর নারীরা। ওই অঞ্চলের ৭ কোটি ৯০ লাখ নারী যৌন হেনস্তার শিকার। যা মোট যৌন নিপীড়নের ২২ শতাংশ। এর পরই আছে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এখানে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্তার শিকার ৫০ লাখ নারী। যা সামগ্রিক হিসাবের ৮ শতাংশ। এ ছাড়ও মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাটি ৭ কোটি ৩০ লাখ বা ৯ শতাংশ, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ৬ কোটি ৮০ লাখ বা ১৪ শতাংশ, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৪ কোটি ৫০ লাখ বা ১৮ শতাংশ, উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় ২ কোটি ৯০ লাখ বা ১৫ শতাংশ এবং ওশেনিয়ায় ৬০ লাখ হলেও জনসংখ্যা অনুপাতে এখানেই সবচেয়ে বেশি ৩৪ শতাংশ বালিকা ও নারী ধর্ষণ ও যৌন হেনস্তার কবলে পড়েছেন। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নে মেয়ে ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ২৪ থেকে ৩১ কোটি ছেলে বা পুরুষের যৌন হেনস্তার মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১১ জনে একজন পুরুষ শৈশবে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ইউনিসেফ বলছে, যৌন নিপীড়নের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। যদিও এর সঠিক তথ্য ও প্রকৃত সংখ্যা নানা কারণে জানা সম্ভব নয়। কারণ লোকলজ্জার মতো নানা সামাজিক কারণে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। ধর্ষণের মতো ঘটনাও অনেকে চেপে যান নানানরকম সামাজিক ট্যাবুর কারণে।
তবে জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে তা যৌন সহিংসতার বিষয়টি জানানো ও শনাক্ত করতে শিশুদের সাহায্য করতে ও আইন কঠোর করার মতো পদক্ষেপগুলো নিতে বিশ্বব্যাপী জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার জরুরি প্রয়োজনকে তুলে ধরেছে সংস্থাটি।