শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পানি কমছে ধীরগতিতে। ভেসে উঠছে ক্ষত। শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। তবে এখনো পানিবন্দি রয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত ৪ অক্টোবর প্লাবিত হয় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলা। এতে দুর্ভোগে পড়েন দুই লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবে এখনো কারও কারও বাড়িতে কোমর পানি, তারা বসবাস করছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে ভাতের ব্যবস্থা না হওয়ায় শুকনো খাবারেই ভরসা তাদের।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, গত আট দিনে বন্যার উন্নতি হলেও ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। জেলার চার উপজেলা আক্রান্ত হয়। অনেক স্থানে বেশ কিছু কাঁচাপাকা সড়ক এখনো রয়েছে পানির নিচে। তলিয়ে যাওয়া ফসল ভেসে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সেগুলোতে আর ধান হবে না। ভেসে গেছে মৎস্য পোনাও। সড়ক-বাড়িঘরের ক্ষতসহ ধানের জমির এমন চিত্র দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পুর্বধলা ও সদরেও। জেলা প্রশাসন সূত্রে ৪৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, এবার কৃষি জমি তলিয়েছে ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর। যা টাকার অঙ্কে ৩১৩ কোটি টাকা। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মোট কৃষক পরিবার ৬৯টি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবির জানান, জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৪৮০টি মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে ৭২৩ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন পোনামাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার ওপরে। তবে এই ক্ষতি আরও বেশি বলে দাবি স্থানীয় চাষিদের। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান. এলজিইডির অন্তত ২০০ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। যার জন্য ২৫০ কোটি টাকা লাগবে মেরামতে।
শেরপুর : টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘরে থাকা পরিবারগুলো। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাসহ টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো বিতরণ করা হবে। স্মরণকালের ভয়াবহ এক পাহাড়ি ঢল দেখেছে শেরপুরবাসী। স্থানীয়দের দাবি, প্রতি বছর বর্ষায় দু-তিনবার ঢলে ভাসলেও এর আগে এমন তান্ডবলীলা কেউ দেখেননি আগে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল চারটি নদীপাড়ের মানুষের সব লন্ডভন্ড করে দেয়। গত তিন দিন বৃষ্টি না থাকায় ও উজানের পানি কমতেই ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। জেলার অন্য তিন উপজেলা বাদে কেবলমাত্র ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেই পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত কিংবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় শেরপুর জেলায় পাঁচ দিনে নারী ও শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় দুই শতাধিক।