শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী তিথিতে বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে গতকাল মন্ডপে মন্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এবার তিথির কারণে মহানবমী পূজার পরই দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। তাই মন্ডপে মন্ডপে বেজে উঠেছে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। গতকাল সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে মন্ত্রপাঠে আনন্দময়ীকে অঞ্জলি দিচ্ছেন ভক্তরা। এরপর দেবী দুর্গার পায়ে সিঁদুর ছুঁইয়ে নেন সনাতন ধর্মাবলম্বী সধবা নারীরা। সারা বছর নিজের সিঁথির সিঁদুর সুরক্ষিত রাখতে দেবী মার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন তারা। কঠোর নিরাপত্তায় মন্ডপগুলোতে চলে পূজার আয়োজন। মন্ডপে প্রবেশকারীদের ব্যাগ তল্লাশি করে দেখেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘এবার নবমী তিথি শুক্রবার শুরু হয়ে শনিবার সকাল ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত ছিল। ফলে আমরা ভোর থেকেই নবমীর বিহিত পূজা করেছি। এবার তিথি অনুযায়ী, নবমী পূজা সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম ছিল। এখানে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নবমী পূজা শেষ করে ৮টা ৫০ মিনিটে ভক্তরা দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করেন। পরে শুরু হয় দশমীর বিহিত পূজা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকাল ৬টা ১৪ মিনিট থেকে দশমী তিথি শুরু হয়েছে। এই দশমী তিথি আজকে (গতকাল) দিবাগত রাত পৌনে ৪টা পর্যন্ত থাকবে। দশমী তিথিতে দিনের মধ্যে পূজা করার নিয়ম আছে। এজন্য আমরা নবমীর পরই দশমী পূজা করছি।’
সনাতন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়, আজ রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে চার দিনের সরকারি ছুটি শেষ হচ্ছে আজ।
বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা আজ (রবিবার) বিকালে পলাশী মোড় থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। সেখান থেকে বুড়িগঙ্গার ঘাটে একে একে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। সারা দেশের পূজা কমিটিগুলোর কাছে বেশি রাত না করে সন্ধ্যার পরপরই প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করছি।’