যুক্তরাষ্ট্রে কথিত মৃত ব্যক্তির বিমার ৫ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঢাকা থেকে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই প্রতারকের নাম মো. আজিজ মোল্লা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আজিজ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে গতকাল নিশ্চিত করেন ডিএমপির নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দীন।
জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ্যানা হ্যারিসন নামে একটি ফেসবুক আইডির সঙ্গে নুরুজ্জামানের যোগাযোগ হয়। এ্যানা একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দিয়ে নুরুজ্জামানকে কথা বলতে বলে। হোয়াটস অ্যাপে সে বাদীকে জানায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের এলাইনস ব্যাংকে বেলটনের ৫ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। সে বাদীকে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য বলে এবং এলাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের আরেকটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দেয়। এ্যানা হ্যারিসন তার বানানো মেসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলে। তারপর বাদীকে সে তার কথিত আইন উপদেষ্টার নম্বর দিলে বাদী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কথিত আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য বাদীকে ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পাঠাতে বলে। পরবর্তী এ্যানা হ্যারিসন ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের একটি পেমেন্ট স্লিপ বাদীকে দেয়। পরবর্তী সময়ে কথিত ব্যাংক ম্যানেজার বিমার ৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির নিকট দুটি লাগেজ প্রদান করেছে বলে বাদীকে জানায় এবং প্রমাণ স্বরূপ একটি ভিডিও দেখায়। ব্যাংক ম্যানেজার বিমা খরচ এবং ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রদান করার কথা বললে বাদী তার কথা মতো ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকাউন্টে তা প্রদান করে। এরপর ৩ অক্টোবর একটি নম্বর থেকে অজ্ঞাতনামা একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং বাদীর দুটি লাগেজ কাস্টমসে আটকে আছে বলে জানায়। লাগেজ দুটি ছাড়াতে ৪ লাখ ৭ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী তাদের কথামতো ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তা প্রদান করে। এরপর বাদী কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথা মতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরও ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে প্রদান করে। এসব টাকা প্রদান করার পরও তারা বাদীর কাছে আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়। এভাবে বারবার টাকা চাওয়ায় বাদীর সন্দেহ হলে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি বাদীর কাছ থেকে সবমিলিয়ে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। ডিএমপির নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দীন বলেন, গত শনিবার ভুক্তভোগী মো. নুরুজ্জামান অজ্ঞাতদের আসামি করে নিউমার্কেট থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন। ওই মামলায় তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আজিজকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামে একটি অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে ৯টি ব্যাংকের ৯টি চেক বই, তিনটি এটিএম কার্ড, দুটি ভিসা কার্ড ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।