দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সাবেক জনপ্রশাসন উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমাম ও স্বৈরাচার আমলের সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের সুযোগে শিল্পকলায় আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। প্রভাব খাটিয়ে দুই বছরের মেয়াদে মহাপরিচালক লাকী ১০ বছর একই পদে একই প্রতিষ্ঠানে বহাল ছিলেন। একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতির ডালপালা বিস্তৃত করতে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে লাকী নিয়োগ দিয়েছেন তার অনুগত ও বিশ্বস্তদের। নিজের অনুগত ৪৬ জনকে নিয়োগ দিতে নম্বরপত্র ঘষামাজা করেছেন। ফলে পরীক্ষায় কৃতকার্য অনেক যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অফিস করার শর্তে কালচারাল অফিসারদের নিয়োগ দেওয়া হলেও নিজ স্বার্থে তাদের ঢাকায় রেখে দেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল এক চিঠিতে সব কালচারাল অফিসারকে ঢাকার বাইরে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে নিজের দুর্নীতির সহযোগীদের রাজধানীতে নিজের কাছে রেখে দেন লাকী। আফসানা খান রুনাকে মুন্সীগঞ্জ, মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে সাতক্ষীরা, খন্দকার ফারহানা রহমানকে শেরপুর, চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদকে চুয়াডাঙ্গা, এরশাদ হাসানকে টাঙ্গাইল, মোহাম্মদ আল হেলালকে নওগাঁ, আসফ-উদ-দৌলাকে বরগুনা ও হাসান মাহমুদকে দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমিতে বদলির চিঠি দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। আটজনের বদলির চিঠি এলেও এরশাদ ও রুনাকে বদলি করে বাকি ছয়জনকে নিজের কাছে ঢাকায় রেখে দেন। অন্যদিকে, যোগ্য কর্মকর্তা এহসানুর রহমানকে শিল্পকলা থেকে বদলি করে দেন। একাডেমির সচিবের পদ শূন্য হলে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব আসার আগে চুক্তিভিত্তিক একজন কর্মকর্তাকে সচিবের দায়িত্ব দিয়ে ২৬ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে লাকীর বিরুদ্ধে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় লাকীর স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিলেও সেটি হয়নি। ২০২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। সম্প্রতি লাকীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছে দুদক। একাধিক সূত্র জানায়, লাকীর সহযোগিতায় একাডেমির চারুকলার সাবেক পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম ওরফে মিনি করিম কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। লাকী এবং তার দুর্নীতি ও লুটপাটের সহযোগী চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদ, আলী আহম্মেদ মুকুল, সৈয়দা শাহিদা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, সাদিয়া বিনতে আফজাল, খন্দকার ফারহানা রহমান, আবু ছালেহ মো. আবদুল্লাহ, মোস্তাক আহমেদ, আসফ-উদ-দৌলা, সামিরা আহমেদ, রাহিমা মজুমদার, মোহাম্মদ আল হেলাল, হাসান মাহমুদ ও রোকসানা রূপসার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন একাডেমিতে কর্মরতরা।