আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম ও ব্যত্যয় চিহ্নিত করবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে অগ্রাধিকার পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ আইন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)। এক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে ওয়েবসাইট; ফেসবুক ও ইমেইলে সবার কাছ থেকে মতামত নেবে এই কমিশন। এজন্য দ্রুতই একটি ওয়েবসাইট চালু করবে সংস্কার কমিশন।
গতকাল কমিশনের বৈঠক শেষ এসব তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। পরে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশন প্রধান। আজও তাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
বিগত তিন নির্বাচনের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে কী অগ্রাধিকার দেবেন- জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অবশ্যই নির্বাচনে যে সব আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে; অনিয়ম ঘটেছে, এগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব এবং এতে ভালো কিছু হয়ে থাকলে সেগুলোও আমরা চিহ্নিত করব। নির্বাচনি প্রক্রিয়াটা তো এক দিনের বিষয় নয়। এটা একটা নির্বাচনি সাইকেল। এই সাইকেলে কী কী ঘটেছে এগুলো আমরা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করব। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি যেগুলো ঘটেছে; সেগুলো আমরা চিহ্নিত করে সেগুলোর ব্যাপারে সুপারিশ করব। স্থানীয় নির্বাচন কখন হবে- এটাও আমাদের এখতিয়ার বহির্ভূত। এটা সরকারকেই নিতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা যথা সময়ে কাজ শুরু করেছি। এখন আমরা আইনকানুন বিধিমালা পর্যালোচনা করছি। যাতে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়, সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে যাতে সংস্কার করতে পারি। আমরা একটা ওয়েবসাইট তৈরি করছি। এতে কী থাকা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের ফেসবুক পেজ হবে, আমাদের ইমেইল হবে। সবার কাছ থেকে তথ্য, প্রস্তাব, সুপারিশ এগুলো আমরা চাইব। ওয়েবসাইট ইসির ওয়েবসাইটের সাবডোমেইন হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে। ওয়েবসাইটে কী বিষয়ে মতামত চাইবেন, সংবিধান নিয়ে কী আলোচনা করছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা লাইন ধরে ধরে পর্যালোচনা করছি। সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু নয়। যেদিন আমরা সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠাব, সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। সংস্কারের অগ্রাধিকার কী থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় আইন হলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)। আরপিও আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য এটা মাদার অব ল। এরপর সীমানা পুনর্নিধারণ আইন আছে, ভোটার তালিকা আইন আছে, ইসি সচিবালয় আইন আছে- এরকম অনেকগুলো আইন আছে। আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন পর্যালোচনা করতে হবে। এসব আইন পর্যালোচনা করে সে বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকসহ এমন অনেক কাজ বিস্তৃত, যেগুলো আমরা পর্যালোচনা করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি কমিশনের নিয়োগের আইন অগ্রাধিকার। এটা নিয়ে কাজ করছি। সরকার যখন চাইবে আমরা আশা করি তখনই আমরা উনাদের একটা খসড়া দিতে পারব। ইসি নিয়োগ আইনটা তো একটা বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত বিষয় নয়। এর সঙ্গে অনেক বিষয় যুক্ত আছে। আলোচনার ভিত্তিতে হলে ভালো হবে। ইসির সংস্কারের মধ্যে বর্তমানে যে নিয়োগ চলছে তা বন্ধ রাখতে বলবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো হচ্ছে নির্বাহী সিদ্ধান্ত। আমাদের নির্বাহী ক্ষমতা বা এখতিয়ার নাই। এটা সরকারের বিষয়। যদি সিদ্ধান্ত দিতে হয় সরকারকে দিতে হবে। নির্বাচনি অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবেন কি-না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সুপারিশ থাকবে। তবে সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। আমরা কর্মকর্তা এবং কমিশনের বিষয়ও পর্যালোচনা করব। না ভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবকিছুই বিবেচনায় নেব। যত মতামত আসবে তত পর্যালোচনা করব। নির্বাচন বিষয়ে যে কেউ যে কোনো মতামত দিতে পারবেন। উন্মুক্ত মতামত নেওয়া হবে। এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, আমরা তো নিশ্চিত করতে পারব না যে কেউ অপকর্ম করবে না। তবে আমরা গার্ডরেইল তৈরি করব। সিঁড়ির পাশ দিয়ে যেমন বেরিয়ার থাকে। কেউ যেন পড়ে না যায়। কিন্তু কেউ যদি ঝাঁপ দিতে চায় তাহলে তো কিছু করার নাই। কিন্তু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব এমন সব সুপারিশ করার, যেন একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়।