মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পর্যায়ের নতুন ৩৯টি আদালত স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ২৬ জেলায় ২৯টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং তিনটি মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ১০টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। তবে নতুন ৩৯টি বিচারকের এসব পদ সৃজনের জন্য আটটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানা যায়। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ নতুন পদ সৃজনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিচার বিভাগে মামলার তুলনায় আদালতের সংখ্যা অনেক কম। আইনের শাসন, সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নিয়োগ করা হলে বিদ্যমান মামলার চাপ প্রশমনসহ মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন এসব আদালত স্থাপনের জন্য নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও বগুড়ার জন্য দুটি করে এবং নরসিংদী, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, রংপুর, মেহেরপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের জন্য একটি করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদ সৃজন প্রস্তাবে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের জন্য চারটি এবং খুলনার জন্য দুটি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ পদ সৃজনের অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিচারকের পদ সৃজনের অনুমোদন পাওয়ার পর এসব আদালতের জন্য সহায়ক পদ সৃজনের কার্যক্রম শুরু হবে। এর মধ্যে প্রত্যেক আদালতের জন্য একজন করে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, বেঞ্চ সহকারী, অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টি করতে হবে। জানা যায়, ৩৯জন বিচারকের পদ সৃজনের প্রস্তাবের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে অধস্তন আদালতগুলোতে ৩৭ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা খুবই কম। কম সংখ্যক বিচারকের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে সারা দেশে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সংখ্যা মামলার সংখ্যানুপাতে অপ্রতুল। ফলে অতিরিক্ত মামলার চাপে হত্যা, মাদক, ডাকাতিসহ গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে- যা একদিকে বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে অপরাধ সংঘটনে অপরাধীদের উৎসাহিত করছে।