রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দায়দায়িত্বহীনতাসহ নানা কারণে দেশের বেশির ভাগ সড়কই এখন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো সড়কপথকে মারণফাঁদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে দায়িত্বশীল মহলকে অবহিত করার পরও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী : রাজশাহী-বানেশ্বর হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক চওড়া ও সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এক বছরও হয়নি। গত বছরের ডিসেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সড়কের কিছু অংশ ফুলে উঠেছে, কিছু অংশে সড়কের দুই পাশ দেবে গেছে। আবার কিছু অংশের সড়ক হয়ে পড়েছে ক্ষতবিক্ষত। এভাবেই গচ্চা গেছে ৫৫৪ কোটি টাকা। সরেজমিন আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, চারঘাট, বাঘা ও লালপুর উপজেলার অন্তত ৩০ স্থানে ছোট পাথর, বালু ও বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেওয়া হয়েছে জোড়াতালি। বাঘার মীরগঞ্জ এলাকার রায়হান আলী জানান, এ সড়ক দিয়ে দিনরাত দক্ষিণাঞ্চলের পাথর ও খাদ্যপণ্য বোঝাই গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে। আবার কোথাও ফেটে উঁচু হয়ে গেছে। এতে গাড়িগুলো ঠিকমতো ব্রেক করতে পারে না। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের কাজ শেষ করে গত বছরের ডিসেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করলেও চারঘাট ও বাঘা বাজারে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এখনো শুরু হয়নি। পুরো সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষত তৈরি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। সাতজন ঠিকাদার সাতটি প্যাকেজে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। এ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেজওয়ানা করিম জানান, দুই বছরের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদার ঠিক করতে বাধ্য। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে সড়ক যেন টেকসই হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজশাহী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম বলেন, সড়কের কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। সড়ক যেন আরও টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয় এজন্য কিছু সংস্কার করা হচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচল কমাতে কাজ চলছে।
সিরাজগঞ্জ : ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়া বাজার থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশ বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। এ সড়কের অন্তত অর্ধশতাধিক পয়েন্টে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। অব্যাহত ভারী বর্ষণে এসব গর্ত সারাক্ষণই পানিতে পূর্ণ থাকছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গর্তে পড়ে যানবাহনের যন্ত্রাংশ নষ্ট ও বিকল হচ্ছে। যানবাহনের ধীরগতির কারণে লেগে থাকছে যানজট। ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ৩ ঘণ্টা। এতে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রী ও চালকদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় পাঁচলিয়া বাজার থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে রাজশাহীগামী মহাসড়কের মান্নাননগর পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক পয়েন্টে কার্পেটিং উঠে গেছে। বেরিয়ে এসেছে ইট-সুরকি। ছোট-বড় গর্তের কারণে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে যানবাহনকে। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। রাস্তার মধ্যে গর্তের কারণে যানবাহন হঠাৎ গতি কমিয়ে নেওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল জানান, ভারী বর্ষণের কারণে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টির হয়েছে। আমাদের বিভাগীয় গাড়ি ও মালামাল এবং শ্রমিকদের এরই মধ্যে খানাখন্দ মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।
বগুড়া : হাটিকুমরুল-এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন সড়কে চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণাধীন মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দ আর নির্মাণসামগ্রীর বিশাল স্তূপের কারণে দিনে-রাতে যানবাহন চলাচলে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া বন্দর এলাকায় মহাসড়কে ট্রাক-বাস অবৈধভাবে রাখায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। এসব কারণে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের মহাসড়কে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের কাজ দ্রুত এগিয়ে চললেও বগুড়া অংশে নির্মাণাধীন এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের কারণে যান চলাচলে বাধা পেতে হচ্ছে। প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকছে। বগুড়া শহরের ছিলিমপুর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে ওভারপাসটির কাজ চলমান। এখানে সড়কের মাঝখানে নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রাখায় চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এ কারণে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ওভারপাসের নিচে খানাখন্দের কারণে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে জনদুর্ভোগ নিত্যদিনের।
রংপুর : রংপুর জেলায় সড়ক বিভাগের অধীনে মহাসড়ক রয়েছে ১০৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে নগরীর সিওবাজার থেকে পাগলাপীর পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার রয়েছে বেহাল দশায়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড় হয়ে বুড়িরহাট পর্যন্ত অবস্থা খুবই নাজুক। জানা গেছে, রংপুরের বুড়িরহাট থেকে গঙ্গাচড়ার শেষ প্রান্ত সিরাজুল মার্কেট পর্যন্ত সংযোগ সড়কের (আঞ্চলিক মহাসড়ক) প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কারসহ বর্ধিতকরণের কাজ ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে গত মার্চে। কাজটি যৌথভাবে করেছে মেসার্স খায়রুল কবির রানা, কে কে আর লিমিটেড ও বরেন্দ্র লিমিটেড নামে তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। একই সময়ে লালমনিরহাট অংশের সিরাজুল মার্কেট থেকে কাকিনা পর্যন্ত ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ করেছে শাহাদাত এন্টারপ্রাইজ। তবে ছয় মাসের মাথায় সড়কের পাশের মাটি ও বিছানো ইট ধসে পড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেতুর উত্তর প্রান্তে লালমনিরহাটের রুদ্রেশ্বরে সংযোগ সড়কে আড়াআড়িভাবে লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি একটি প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়েছে। এতে ভারী যান চলাচল করতে না পারলেও পিকআপ, কার, মাইক্রোবাস কোনো রকমে চলাচল করছে। এদিকে নগরীর সিওবাজার এলাকা থেকে পাগলাপীর পর্যন্ত রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক খানাখন্দে ভরপুর। প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ পথে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন ওই রুটে শত শত বাস চলাচল করে। এ ছাড়া মালবাহী ট্রাক, অটো, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে এ ব্যস্ত সড়কটিতে। স্থানীয়রা দ্রুত সড়কটির মেরামত দাবি করেন।
রংপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সিওবাজার থেকে পাগলাপীর পর্যন্ত সড়কের যেসব স্থানে গর্ত হয়েছে ওইসব স্থানে ইট দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই সড়কের সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে, খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
বরিশাল : পদ্মা সেতুতে চালু হওয়ার পর বরিশাল-ঢাকা রুটের মহাসড়কে যাত্রী চলাচল যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে যানবাহন। বর্তমানে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রীরা যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তেমনি যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের চালক আবদুল মান্নান বলেন, ভাঙ্গার পর থেকে প্রত্যেকটি বাজারের সামনের রাস্তা ভাঙা। সবচেয়ে বেশি গৌরনদীর পর থেকে। ভাঙা রাস্তার কারণে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এতে আসা-যাওয়া করতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, একটু পুরনো গাড়ি এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিআরটিসির বাসের চালক বাবুল সরদার বলেন, সড়কের মধ্যে বড় বড় খানাখন্দ রয়েছে। দুই পাশেও গর্ত হয়েছে। এতে সাইড দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। খানাখন্দের কারণে ছোট ছোট যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, উজিরপুরের জয়শ্রীর পর থেকে বেশি গর্ত হয়েছে। মহাসড়কের ১৫ কিলোমিটারের অবস্থা খুব খারাপ। তিনি বলেন, বর্ষার কারণে রাস্তায় ফাটল ধরে। যানবাহন চলার কারণে ফাটল থেকে গর্ত সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে সেটা বড় হয়ে গেছে। এখন যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত না করা হয়, তাহলে মহাসড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বলেন, এবার অসময়ে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। তাই মেরামত কাজ শুরু করা যায়নি।
পটুয়াখালী : বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর খবর প্রকাশের পর পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা বাজার থেকে শেখ রাসেল সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের দুর্ভোগের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সেই মহাসড়কের কাজ দেড় কিলোমিটার সংস্কার করার পর আবারও তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পর্যটক চলাচলরত যাত্রী ও সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি লেগেই রয়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ভোগান্তির কথা চিন্তা করে কাজ শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু বর্ষা না কমায় বন্ধ করা হয়েছে। বর্ষা কমলেই আবারও সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
চট্টগ্রাম : বন্যা এবং বর্ষায় চট্টগ্রামের সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। পানির স্রোতে নষ্ট হয় মহাসড়ক। এরপর প্রায় দুই মাস চলে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা হয়নি। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। এতে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ক্ষতবিক্ষত সড়ক মেরামত না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সওজ চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহউদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই-সীতাকুন্ড অংশের প্রায় ৬৮ কিলোমিটারের অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া মহাসড়কের বাইরেও অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এসব সড়ক মেরামতে ৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে বরাদ্দের জন্য আবেদন করলে ৭ কোটি টাকা পাওয়া যায়। শিগগিরই দরপত্রের মাধ্যমে এসব কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হবে।
নোয়াখালী : বন্যা পরবর্তীতে নোয়াখালীতে ৩ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। নোয়াখালী সদরের উদয় সাদুরহাট সড়ক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সড়ক, নেওয়াজপুর সড়ক, শরিফপুর ইউনিয়ন সড়ক, খলিফার হাট ও চরমটুয়া সড়ক, সুবর্ণচরের থানারহাট সড়ক, চরওয়াপদা, চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর সড়কসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের করুণ অবস্থা। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। যানবাহন এবং মানুষের দুর্ভোগ লেগেই আছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম জানান, বন্যায় এবার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার কিমি গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর তালিকা করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় অফিসে তালিকা পাঠানো হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক রাস্তাঘাট। কিছু কিছু সড়কে খোয়া, রাবিশ ও বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। একইভাবে নোয়াখালী চন্দ্রগঞ্জ সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। বাড়ছে অহরহ দুর্ঘটনা। সদরের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতিদিন যানবাহন চলাচলে রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং সংস্কার কাজ চলছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে।
ফেনী : দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে খানাখন্দে জর্জরিত ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের লেমুয়া থেকে মমতাজ মিয়া সড়কটি। পিচঢালা সড়কটিতে নেই বিটুমিনের কোনো অস্তিত্ব। ১৯৯৬ সালে সড়কটির কিছু অংশ ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দ্বিতীয় দফায় বাকি কাজ সম্পন্ন হয়।
স্থানীয়রা জানান, বিগত সরকারের আমলে মাটি সিন্ডিকেটের ১০ থেকে ১৫টি গাড়ি দৈনিক এ সড়ক দিয়ে চলাচল করত। গভীর রাত পর্যন্ত গাড়িগুলো চলা। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। বর্ষা নামলেই বৃষ্টির পানিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরে। সে অবস্থায় গাড়ি চলায় পুরো সড়ক ভেঙে গেছে।
জানতে চাইলে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী দীপ্ত দাশগুপ্ত জানান, ‘সড়কটি আমার সময়ে হয়নি। লেমুয়া-মমতাজ মিয়া সড়কের সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে বাজেট পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটি দুই পাশে বর্ধিত করার চেষ্টা চলছে।’
কুমিল্লা : বন্যা-বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। মহাসড়কের কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, কোথাও উঠে গেছে পিচ-খোয়া। এসব মহাসড়ক ব্যবহারকারী যানবাহনের যাত্রী, চালক, দুই পাশের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে ভোগান্তি। মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে পড়েছে চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার। এ মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের নোয়াপাড়াসহ কয়েকটি স্থান দেবে গেছে। আদর্শ সদরের নিশ্চিন্তপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত দুই লেনে উঠে গেছে পিচ-খোয়া। এতে যানবাহন ধীরগতিতে চলে। সৃষ্টি হয় যানজট। ধুলাবালি উড়ে জনজীবনে ভোগান্তির সৃষ্টি করে। এ ছাড়া চান্দিনা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুই লেনে ভাঙা রয়েছে। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে পড়েছে ৪০ কিলোমিটার। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে দেবিদ্বার সদর, কংশনগর, পান্নারপোল স্টেশন ও জাফরগঞ্জ অংশ। কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের (বাস মালিক সমিতি) সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার বলেন, কুমিল্লার বিভিন্ন মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সড়কগুলো তাড়াতাড়ি সংস্কার করা প্রয়োজন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বন্যা ও বৃষ্টিতে কুমিল্লায় বিভিন্ন সড়কে কিছু ক্ষতি হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আমরা সংস্কারে যাব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া প্রকল্পে চার লেন রাস্তার কাজ পেয়েছিল ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চার লেন রাস্তার কাজ ফেলে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে এখন আশুগঞ্জ আখাউড়া প্রকল্পের কয়েকটি স্থানে রাস্তা পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। মৃত্যুর ঝুঁঁকি নিয়েই সড়কটিতে চলছে যাত্রীবাহী যানবাহন। রাস্তার মাঝখানে গর্তে পানি জমাটে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ চার লেন রাস্তার বেহাল দশা ও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ঘাটুরা, বিরাসার মার্কাজ মসজিদ থেকে পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা, সুলতানপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে। প্রতিদিন একের পর এক যানবাহন মারাত্মকভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এ চার লেন সড়ক দিয়ে ঢাকা-কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট-চট্টগ্রাম চলাচল করে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যানবাহন। আশুগঞ্জ থেকে সুলতানপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বাস-ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা। প্রায় সময় এসব যানবাহন রাস্তার গর্তে পড়ে উল্টে পড়ছে প্রতিদিন। দীর্ঘ লম্বা জ্যামে আটকা পড়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। আখাউড়া-আশুগঞ্জ চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেরই ঠিকাদার ছিলেন ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে ফিরে গেছেন। তারা কবে ফিরবেন- এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে- আমরা তা এখন বলতে পারছি না।
খুলনা : খুলনা-সাতক্ষীরা, খুলনা-মোংলা মহাসড়কসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন সড়কে ছোটবড় খানাখন্দে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। নির্মাণকাজের কয়েক বছরের মধ্যেই খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে পিচ উঠে গর্ত ও অসংখ্য স্থানে লম্বালম্বি উঁচু বা দেবে গেছে। বেহাল সড়কে চলাচল করতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। জেলা সদর থেকে উপজেলাগুলোতে যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ নেই যাত্রীদের।
এদিকে গত দুই মাসের টানা অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে মেরামত কাজে দুই দফায় ৮০ কোটি টাকার সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে সড়ক বিভাগ। তবে বর্তমানের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় প্রকল্প গ্রহনে ‘ধীরে চলো নীতি’ নিয়েছেন কর্মকর্তারা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়নে যশোর-খুলনা-মোংলা ১১০ কিলোমিটার সড়কে চার লেন প্রশস্তকরণ প্রকল্প নেওয়া হয়। এটি অনুমোদিত হলে ২০২৬-২৮ সাল পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের কাজ করা হবে। ব্যবসাবাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষেত্রে এটি জরুরি কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রকল্প গ্রহণে কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
যশোর : ছোটবড় গর্ত আর পিচ উঠে যাওয়ায় যশোরের তিন মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোতে চলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন যানবাহনের চালকরা। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছেন যানবাহনের মালিকরা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কগুলোর প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তাজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। অনেক স্থানে বিটুমিনের কোনো চিহ্ন নেই। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রায়ই এসব সড়কে সংস্কার কাজ করে। কিন্তু কাজের মান খারাপ হওয়ায় বৃষ্টিতে সড়কগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। যশোর থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চলাচলের একমাত্র উপায় যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক। এ মহাসড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার অংশে বিটুমিনের কোনো চিহ্ন নেই। পুরোপুরি ইটের সলিং হয়ে গেছে। এ ছাড়া যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নাভারন থেকে বাগআঁচড়া পর্যন্ত এবং যশোর-ঢাকা মহাসড়কের মণিহার অংশের অবস্থাও বেহাল। যশোরের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে মহাসড়কগুলোতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যশোর-খুলনা মহাসড়কের আড়াই কিলোমিটার রাস্তার ঢালাই কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মহাসড়ক জরুরি সংস্কারের জন্য ৭ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিষয়খালী এলাকায় দুই লেনের সড়কটির মাঝখানে সৃষ্টি হয়েছে অন্তত ৬টি ডিভাইডার। সড়কের অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে উঁচু ঢিবি। অনেকেই বলেন, যেন বিশ্বরোডের বিষফোড়া। সড়কের এমন চিত্র তেঁতুলতলা, কালীগঞ্জের নিমতলাসহ অনেক স্থানে। অথচ এই সড়ক সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১০ এপ্রিল। সম্প্রতি ওই সড়কের চটুলিয়া, বিষয়খালী ও কয়ারগাছি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের মাঝখানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। আবার অনেক জায়গায় খানাখন্দ আর উঁচু ঢিবি। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলতে পারছে না। অনেক স্থানে চালকদের সচেতনতামূলক নির্দেশনার সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। বিষয়খালী বাজার থেকে তেঁতুলতলা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের অবস্থা খুব নাজুক। পাঁচ মাস ধরে এ অবস্থা। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই সড়কটির সংস্কারের কাজ ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ফলে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী বিমান কুমার ধর বলেন, ‘সড়ক বিভাগ দায়সারা কথা বলছে। তারা আমাদের কাছে কোনো কাজ হস্তান্তর করেনি। সড়কের সংস্কার কাজ আমাদের করার কথা ছিল না। তবু মানুষের ভোগান্তি দেখে কয়েকটি এলাকা সংস্কার করে দেওয়া হচ্ছে।’
শেরপুর : শেরপুরে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর পরই সড়ক, ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতবিক্ষত অবস্থা বের হয়ে আসছে। কোনো কোনো সড়ক কালভার্ট একেবারে ভেঙে গেছে, কোনোটিতে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডির রাস্তার অন্তত ২২৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত নালিতাবাড়ীর বারোমারী-শেরপুর সড়কে যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। অনেক সড়ক দিয়ে এখনো স্বাভাবিক চলাচল শুরু হয়নি। সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দ্রুতই প্লাবিত হয়ে যায় শেরপুর জেলা। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা। এ ছাড়াও ঢলে আঘাত হানে শেরপুর সদর, শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলার কিছু অংশেও। চলতি আমন-বোরো ধান, সবজি, পুকুর ও মাছের খামার এবং গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীণ জনপদের প্রায় অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়কসহ বেশ কয়েকটি মাঝারি পাকা সড়কেরও ক্ষতি হয়। ঢলের পানির তীব্র গতিতে ল-ভ- হয়েছে জেলার কাঁচা-পাকা সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়ক এখনো যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়নি। ফলে পানি কমলেও মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জাহানারা বেগম জানান, ক্ষতির পরিমাণ ও সম্ভাব্য ব্যয় সরকারকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিলেট : ছয় লেন কাজে ধীরগতি, স্থানে স্থানে খানাখন্দ- সব মিলিয়ে ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক। প্রায় এক বছর ধরে এ মহাসড়কের যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহালেও কাজে গতি আসছে না। সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় লেনের কাজ চলায় তারা ভাঙাচোরা মহাসড়ক মেরামতে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে রাজি নন। কোনো মতে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার চালিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে এক পাশ বন্ধ রেখে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজ। নির্মাণকাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এ ছাড়া মহাসড়কের সিলেট বিভাগ অংশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণকাজ ছাড়াও ভোগান্তি বাড়িয়েছে মহাসড়কের খানাখন্দ। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দেবে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। আবার কোথাও পিচ সরে গিয়ে নিচের পাথর বের হয়ে এসেছে। এসব কারণে যানবাহনের গতি কমে আসায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমীর হোসেন জানান, দুই লেনের মহাসড়কটি ছয় লেন হচ্ছে। তাই পুরনো সড়কে খুব বেশি ব্যয় করা হচ্ছে না। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল ততটুকু করা হচ্ছে।
কক্সবাজার : ভারী বর্ষণ ও কয়েক দফা বন্যায় কক্সবাজারে ৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বেহাল অবস্থা। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উনচিপ্রাং থেকে টেকনাফ উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার কাজের ধীরগতিতে জনভোগান্তি বেড়েছে। সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা মুন্সী জানান, ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী জুনের মধ্যে ওই সড়কের কাজ শেষ হলে জনভোগান্তি কমবে।