সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও তা অনিয়মিত হওয়ায় চলতি মৌসুমে চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। ফলে ভরা মৌসুমেও বাজারে চা সরবরাহ কমে গেছে। গত বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হলেও এবার চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা ছাড়ছেন না বাগান মালিকরা।
চা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা উৎপাদনের পর চলতি বছর ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৩২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। যদিও এ সময়ে উৎপাদনের টার্গেট ছিল বেশি। সেপ্টেম্বর মাসের উৎপাদনের হিসেব এখন পর্যন্ত সরবরাহ করেনি চা বোর্ড। গত মৌসুমে একই সময়ে (আগস্ট পর্যন্ত) প্রায় সাড়ে ৫ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়। চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে চায়ের ভালো দাম পাওয়ার পরও বাগান মালিকরা চা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। দাম ভালো থাকলে মালিকরা চায়ের সরবরাহ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। মূলত অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় ভরা মৌসুমে চায়ের উৎপাদন কম হচ্ছে।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত জুন-অক্টোবর পর্যন্ত নিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশে এ সময়ে সর্বোচ্চ চা উৎপাদিত হয়। এ সময়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং পরিমিত বৃষ্টিপাত হলে চায়ের উৎপাদন আশানুরূপ হয়। কিন্তু এ বছরের গ্রীষ্মে চরম তাপের পাশাপাশি বর্ষায় বৃষ্টিপাতও ছিল অনিয়মিত। কখনো কখনো অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবার কখনো বৃষ্টির দেখাই মেলেনি। এ কারণে চা উৎপাদনের উপযোগী পরিবেশ বিঘিœত হয়। ফলে উৎপাদন কমে যায়। চট্টগ্রামের চা নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বছরের এ সময়ে চায়ের নিলাম জমজমাট থাকে। এ সময়ে বাড়তি উৎপাদনের কারণে বাজারে চায়ের সরবরাহ বাড়তি থাকে। কিন্তু এ বছর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেওয়ার পরও বাজারে চায়ের সরবরাহ কম। গত পাঁচটি নিলামে আগের বছরের তুলনায় ৩২ লাখ কেজি কম চা বিক্রির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ায় নিলামে সরবরাহ কমে গেছে বলে মনে করছেন বাগান ও ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুল রহমান বলেন, ‘এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে এখনো বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বছরের শেষ কয়েক মাসে উৎপাদন বাড়লে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হতেও পারে।’