যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। নির্বাচনি প্রচারের শেষ মুহূর্তে কমলা হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকার ভোটারদের সর্বোচ্চ সমর্থন আদায়ে জোর চেষ্টা চালালেও তাতে তেমন ফল হচ্ছে না বলে ধারণা পাওয়া গেছে। ভোটাররা ক্রমেই ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
খবরে বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক বেশি। তবে এবারের নির্বাচনে
রিপাবলিকানরা এ দুই গোষ্ঠীর ভোটারদের নিজেদের দলে নিয়ে আসতে সফল হচ্ছেন। সাম্প্রতিক কিছু জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন আদায়ে সফল হচ্ছেন। ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনেও এ দুই গোষ্ঠীর বড় সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনার এক জরিপে দেখা গেছে, এবার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের ৭৮ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করছেন। অথচ এর আগের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষে প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গের সমর্থন ছিল। ডেমোক্র্যাটিকদের প্রতি এ গোষ্ঠীর পুরুষ ভোটারদের সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকার ভোটাররা এবার ভোটের ফল উল্টে দিতে পারেন। অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে চারজন ভোটারের মধ্য প্রায় একজন লাতিন আমেরিকান বলে ধারণা করা হচ্ছে। নেভাদায় লাতিন ভোটার প্রায় ২০ শতাংশ। অন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে জর্জিয়ায় মোট ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। কার্যত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে এসব ভোটের হার অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। ট্রাম্প কেন কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানদের সমর্থন আদায়ে সফল হচ্ছেন-সে বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সিংহভাগ ভোটারের জন্য অর্থনীতি, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাপনের ব্যয় প্রধান বিবেচনার বিষয়। কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকান ভোটারের অনেকের কাছে দলবদলের এটি একটি বড় কারণ। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, এ দুই গোষ্ঠীর কেউই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। এসব ভোটারের একজন কুয়েন্টন জর্ডান। ৩০ বছর বয়সি ভার্জিনিয়ার এ বাসিন্দা একবার বারাক ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে পা রাখার পর থেকে ট্রাম্পকেই ভোট দিয়ে আসছেন তিনি। নেভাদা অঙ্গরাজ্যে বিপুলসংখ্যক লাতিন আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বসবাস। সেখানকার শহর লাস ভেগাসের বাসিন্দা লিডিয়া ডমিঙ্গেজ বলেন, অনেক লাতিন আমেরিকান ট্রাম্পের সময়কার অর্থনীতির কথা মনে রেখেছেন। অর্থনৈতিক উদ্বেগের অর্থ হলো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া আর কলঙ্কজনক বলে ধরা হবে না। লিডিয়া বলেন, তাঁরা জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দিতে পারছেন না, যা সত্যিকার অর্থেই নির্বাচনের জন্য একটি বড় বিষয়। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সমর্থন করা এখন আর খারাপ কিছু নয়। এ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এবার যাঁরা কমলা হ্যারিসের পক্ষে তাঁরাও বলেছেন, অর্থনৈতিক কারণে তাঁদের অনেকে দল বদলাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
টেক্সাসের রোনালদো রদ্রিগেজ একসময় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক ছিলেন। এখন তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের হার রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কোয়ড্রিকস ড্রিসকেলন বলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কৃষ্ণাঙ্গদের দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী বিভিন্ন সামাজিক এজেন্ডা গ্রহণ করায় তাঁদের পুরুষ ভোটারের অনেকেই দল বদলেছেন।