২২ অক্টোবর, ২০১৬ ১৭:২১

নারকেলের কত গুণ!

অনলাইন ডেস্ক

নারকেলের কত গুণ!

নারকেল কম-বেশি সবার পছন্দ। এটা দিয়ে হয় হরেক খাবার। কখনও নারকেলের নাড়ু আবার কখনও বা নারকেলের তৈরি সন্দেশ। পায়েশ রান্নায়ও ব্যবহার করা হয় নারকেল। কিন্তু জানেন কি এই নারকেল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপকারি? নারকেলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। নারকেল আমাদের নীরোগ রাখতে সাহায্য করে।

নারকেলের গুনাগুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন অতীনস–এর প্রফেসর ডাঃ অতীন ব্যানার্জি। তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন নারকেল ফল হলেও তেল থাকায় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আমরা নারকেল গাছকে ট্রি অফ লাইফ বলি। এর খাদ্যগুণ যেমন বেশি সেরকমই চিকিৎসা শাস্ত্রে এর অবদান অনন্য। সাবেকি ও আয়ুর্বেদিক মেডিসিনে সারা পৃথিবী বিখ্যাত। একটি নারকেলের সাতটি অংশ থেকে আমরা নানানভাবে উপকৃত হই। ১)‌ ডাব বা নারকেলের পানি, ২)‌ ডাবের নরম ও পাতলা শাঁস, ৩)‌ শক্ত  নারকেল, ৪)‌ নারকেল তেল, ৫) ‌নারকেলের দুধ ৬)‌ নারকেলের আটা ও ৭)‌ নারকেলের ফোঁপল। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র  চড়ক সংহিতাতেও এর উল্লেখ রয়েছে। শুধু মানুষ নয়, যে কোনও প্রাণীর চিকিৎসায়, বিশেষত পুরনো রোগের চিকিৎসায় অব্যর্থ।

এবার দেখে নেওয়া যাক নারকেল কী কী ভাবে আমাদের নীরোগ থাকতে সাহায্য করে।
✌ ত্বকের অসুখে, ত্বকের র‌্যাশে বিশেষত বয়স্ক এবং বাচ্চাদের র‌্যাশে, অ্যাকনে, ত্বকের ইনফেকশনে, চুলকানি, হারপিস, এগজিমা, ঝুলে যাওয়া ত্বককে টান টান ও মসৃণ করে নারকেল তেল। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করে নারকেল তেল ও দুধ। ত্বকের যে কোনও ক্ষত সারাতে, পুঁজ দূর করে ক্ষত শুকোতে সাহায্য করে। ত্বকের জ্বালায়, সোরিওসিসের ক্ষেত্রেও খুব উপকারী।

✌ চুল ভাল রাখতে সাহায্য করে নারকেল তেল। মাথায় খুশকি, শুষ্কতা দূর করে চুল পড়া বন্ধ করে। এছাড়াও গর্ভবতী থাকাকালীন পেটে নারকেল তেল নিয়মিত লাগালে স্ট্রেচ মার্ক আসে না। এক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকেই পেটে তেল লাগাতে হবে।
 
✌ বদ হজমের ক্ষেত্রে বা যে কোনও পেটের রোগে নারকেলের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পিত্তঘটিত যে কোনও রোগের নিরাময়ে প্রথম সারিতে রাখা হয়েছে নারকেলকে। যে কোনও গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যায়, পেট ফোলা ও ফাঁপায়, গ্যাস্ট্রিক আলসারে, গ্যাস্ট্রোরাইটিস, পানি থেকে হওয়া পেটের রোগ সারিয়ে তোলে নারকেল। টেপ ওয়ার্ম, রিং ওয়ার্ম অর্থাৎ কৃমি নষ্ট করে নারকেল। অন্ত্রে ভিটামিন মিনারেল অ্যামিউনো অ্যাসিড শোষণ করে। পুরনো আমাশা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলস ও ফিসচুলার মতো রোগ প্রতিরোধ করে।

✌ অগ্ন্যাশয়কে ভাল রাখতে ও মধুমেহ রোধ করতে নারকেল উপকারী। রক্তে ইনস্যুলিনের মাত্রা বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে নারকেলের ভূমিকা যথেষ্ট। ইনস্যুলিন বেড়ে গেলে আমাদের লোহিত রক্তকণিকার ওপরের ভাগে গ্লুকোজের আস্তরণ থেকে যায়। সুগার বেড়ে যায়। পেট, থাই, কোমরের চর্বি বাড়ে।

✌ এনজাইম বা উৎসেচকের কার্যকারিতা বাড়ায় নারকেল। প্যাংক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। মধুমেহ রোগীদের খাওয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায় মধুমেহ রোগীরা খাবার খাচ্ছেন। কিন্তু পুষ্টি নিতে পারছেন না। তাই ক্রমশ রোগা হয়ে যাচ্ছেন। নারকেল খাবারের পুষ্টিগুণকে রক্তে মেশাতে সাহায্য করে।

✌ হাড়ের রোগে নারকেলের দুধ বেশ উপকারী। হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম  শোষণ করতে সাহায্য করে। অস্ট্রিওপোরেসিস, অস্ট্রিও আর্থারাইটিস, যে কোনও হাড় সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় অব্যর্থ নারকেল। ব্যথা কমে।
 
✌ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ায়। এইচ আই ভি, এইডস, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা, ইউরিনাল ট্র‌্যাকে ইনফেকশন, ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেসে এই ফলটি কাজ দেয়। ফাঙ্গাল ইনফেকশনে খুব উপকারী। নারকেল তেল নিয়মিত লাগালে এই ধরনের সমস্যা থাকে না।

✌ নারকেল রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টের সমস্যা দূর করে।

✌ লিভারের অসুখের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সি, জন্ডিস  ও অন্যান্য লিভারের অসুখে বেশ ভাল কাজ দেয় নারকেলের দুধ।

✌ যে কোনও দাঁতের রোগ, মাড়ির সমস্যা, ক্যাভিটিজ ও স্কারভিতে নারকেল কোরা দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার হয়।

✌ কেটোজনিক ডায়েট চার্ট করলে ওজন কমে। এই বিশেষ ডায়েট চার্টের প্রধান উপকরণ নারকেল। তবে কেটোজনিক ডায়েটে অনেক রকম নিয়ম মেনে চলতে হয়। মিষ্টি ও চিনি একেবারেই খাওয়া চলে না। ভাত, রুটিও খাওয়া যায় না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ডায়েট নেওয়া উচিত। এই ডায়েট মেনে চললে সপ্তাহে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন কমতে পারে। হাইপো থাইরয়েড রোগীদের ওজন কমাতে সাহায্য করে কেটোজনিক ডায়েট। নারী-পুরুষ, শিশু এবং ওজন ও উচ্চতার ওপর এই ডায়েটের চার্ট নির্ভর করে। যে কোনও ফলের পরিবর্তে ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।

কেটোজনিক ডায়েট চার্ট
ব্রেকফাস্ট‌:‌ ২ টা ডিম সিদ্ধ, একটা শসা,
২৫ – ৩০ গ্রাম নারকেল
দুপুরে :‌ সবজি, ৩০০ – ৪০০ গ্রাম মাছ ,
৫০ গ্রাম নারকেল
রাতেও দুপুরের মত একই খাবার খাবেন।
মাঝে ক্ষুধা পেলে যে কোনও ফল
খাওয়া যেতে পারে।

✌ যে কোনও অর্গ্যানের ডি টক্সিফিকেশনে সাহায্য করে নারকেল। কিডনির পাথর, কিডনির অন্যান্য সমস্যায়, বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়া আটকায়।  চটজলদি এনার্জি পেতে, গলায় ইনফেকশন, গলা বসে যাওয়া, ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ, নিউমোনিয়া ব্রঙ্কাইটিস অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে উপকারী। নারকেল দেখতে স্কালের মতো। এটি মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে। খিঁচুনির মতো নার্ভের রোগ সারিয়ে তোলে। বাচ্চাদের  টানা ২–‌৩ বছর  কেটোজনিক চিকিৎসা করালে এই ধরনের নার্ভের রোগ সেরে যায়।
✌ টিবি, টিউমার, টাইফয়েড, আলসার, পা ফোলা সারাতে নারকেল খুব উপকারী। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে। নারকেলের পানিতে ক্যালরি খুব কম। এই পানি কার্বোহাইড্রেট, সুগার ও ফ্যাট ফ্রি। এই পানিতে থাকা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, প্রোটিন শোষণে সাহায্য করে। নারকেলের শাঁস টিস্যুর ক্ষত সারায়। ডাবের পানিতে ৩৫ ক্যালরি ও নারকেলের পানিতে ৬৫ থেকে ৭০ ক্যালরি থাকে। বাচ্চা বা বড়দের হেঁচকি ডাবের পানি খাওয়ালে বন্ধ হয়।

তবে নারকেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই নারকেল বেশি খেলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। খুব বেশি নারকেল খেলে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে।


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর