২৯ মার্চ, ২০১৭ ১৪:২৭

যে কারণে ধূমপানে আকৃষ্ট হচ্ছে নতুন প্রজন্ম

অনলাইন ডেস্ক

যে কারণে ধূমপানে আকৃষ্ট হচ্ছে নতুন প্রজন্ম

এক সময় ধূমপান করা যেন এক ধরনের পাপ ছিল। “ও খোদা! সিগারেট! না বাবা না। বাসায় জানলে মেরেই ফেলবে।” সেই কথাগুলো বোধহয় এখন আর শুনতে পাওয়া যায় না। যে হারে নতুন প্রজন্ম ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে পুরুষের পাশাপাশি বেড়েছে নারী ধূমপায়ীর হারও। বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে ছাড়ি ছাড়ি করেও ছাড়তে পারছে না। ধূমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে সফলতার হার খুবই নগন্য বলা চলে।

ধূমপানে আসক্তির পেছনে নানা কারণ থাকে। নিচে এমন কিছু কারণ দেওয়া হলো-

সময় কাটানো
বর্তমানে শিশুদের খেলার মাঠ নেই বললে চলে। নেই সুস্থ বিনোদনের সুযোগ। কিন্তু পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিনোদনের তো প্রয়োজন। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও একটা কিশোর  সকালে স্কুল বা কলেজে যেত, সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে গোসল-খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম বা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া, বিকাল হলেই ব্যাট-বল হাতে নিয়ে মাঠে ছুটতো। সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে ফিরতে হতো। এরপর বাড়ির কাজ শেষ করে খাওয়া-দাওয়ার পর টিভি দেখা বা ঘুম। শুরু হতো আরেকটা দিন। এখন খেলাধূলার ব্যবস্থা না থাকায় ছেলে-মেয়েরা আড্ডা, মোবাইল বা কম্পিউটার গেম, সিনেমা দেখা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় পার করে দেয়। আর এই অলস আড্ডায় যে কখন সিগারেট এসে ঢুকে পড়ে তা হয়ত ওই কিশোর নিজেই বুঝতে পারে না।

বাসা থেকে

যদি কেউ ছোটবেলা থেকে দেখে আসে যে তার বাবা অথবা মা ধূমপান করে, তার ধূমপান করতে কোন প্রকার দ্বিধাবোধ থাকে না। শুধু বাবা-মাই নয়, পরিবারের যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এটা আসতে পারে। অনেক সময় বাবার প্যাকেট থেকেও সিগারেট চুরি করতে পিছুপা হয় না সন্তান।

সাথে সাথে মৃত্যু হয় না

ধূমপানে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মানুষ ধূমপান করেই যাচ্ছে। কিন্তু কেন? বিষ পান করার সাথে সাথে মানুষ মারা যায়। কিন্তু ধূমপান মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাই অনেককে বলতে শোনা যায় যে, 'ধূমপান করে তো কাউকে মরতে শুনিনি।' আসলে ধূমপান করার কারণে অসুস্থ হয়ে কতজন হাসপাতালে গেল সেই খোঁজ কে রাখে? আর অসুখ তো আর বলে দেয় না যে, রোগটা ধূমপানের কারণেই হয়েছে। আর যেহেতু তাৎক্ষণিক দৃশ্যমান ক্ষতি নেই, তাই ধূমপানকে তেমন কোন বিষয় মনে করছে না নতুন প্রজন্ম। জড়িয়ে পড়ছে ধূমপান চক্রে।

মানসিক চাপ

প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই যুগে সবাইকে নাম্বার ওয়ান হতে হবে। এত চাপ একজন কিশোর কীভাবে সহ্য করবে? অগত্যা হতাশায় জর্জরিত হয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে যা তাকে সঙ্গ দেবে। আর এই সময় কোন বিপজ্জনক বন্ধুর সংস্পর্শে সে ধূমপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ধূমপানের মাধ্যমে নিজেকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে চায়।

অল্প বয়স

সাধারণত অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা ধূমপানে বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২৫ বছরের উপরে সাধারণত খুব কম মানুষই এর প্রতি আসক্তি অনুভব করে। কৈশোর বয়সে ভাল-খারাপের ধারণা কয় জনেরই বা থাকে! আর এ সময় নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি ঝোঁক থাকে সবচেয়ে বেশি।

সাহস দেখানো ও গ্রুপে মিশে থাকার জন্য

বয়স কম উত্তেজনা বেশি। কেউ বলল “পারিস খেতে, পারলে দে এক টান!” আর ওমনি সাহস দেখানোর জন্য সিগারেটটি হাতে নিয়ে দিয়ে দিল এক টান। ওই যে শুরু, আর পিছপা হতে পারে না।

এটা যেন বড় হওয়ার প্রথম ধাপ। ধূমপান না করা মানে সে এখনো বাচ্চাই থেকে গেছে। এছাড়াও ধূমপানে স্মার্টনেসের একটা ব্যাপার আছে বলে মনে করে অনেক টিনএজার। বেশির ভাগ কিশোর মনে করে যে ধূমপান করা স্মার্টনেস।

বিজ্ঞাপন, নাটক বা সিনেমা দেখে
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, নাটক এবং সিনেমাতে ধূমপানকে এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন এটি খুবই স্বাভাবিক একটা কাজ। সিনেমার নায়ক যখন ধূমপান করছে আর শত শত ভিলেনকে মেরে তাড়িয়ে দিচ্ছে, তখন আপনার সন্তান নায়কের ভাল দিকগুলোর সাথে সাথে ধূমপান করাকেও স্বাভাবিক মনে করতে থাকবে।

শখ
বিভিন্ন সময় মানুষ শখের বসে ধূমপান করে। ধরুন আপনার বন্ধুদের মধ্যে সবাই সিগারেট খায় কিন্তু আপনি খান না। একদিন শখের বসে আপনি একটি সিগারেট খেয়েই দেখলেন। ভাবলেন ব্যাস। আর না। কিন্তু এতে আপনার যে বাধাটা ছিল সেটা কেটে যাবে। ফলে পরে এমন সুযোগ পেলেই তা হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

প্রথম দিকে সিগারেটের তিক্ত স্বাদ আপনাকে এরকমই বোধ করাবে। ভাববেন একটা খেলে কিছু হবে না। আর খাব না। কিন্তু নিকোটিনের প্রভাব আপনার শরীরে বিস্তার করা শুরু করবে। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার আরও একটি সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হবে। এভাবে এক দিনের শখ সারা জীবনের আসক্তিতে পরিণত হতে পারে। ফলে ধূমপানের জন্য প্রতি মাসে একটা বাজেট তো রাখতেই হবে, পাশাপাশি হাসপাতালের জন্য কিছু জমা করা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। কারণ, এটা শুধু আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকিই বাড়াবে না, ব্লাডপ্রেসার, চোখের অসুখ, ডায়াবেটিকসহ নানা রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে সুযোগ করে দেবে।

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

সর্বশেষ খবর