বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কারণেই প্লাস্টিক সার্জারি করে মানুষ। তবে এই ধরণের পদক্ষেপের আগে অবশ্যই প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়ে পূর্ণ ধারণা থাকা উচিৎ। অনেক সময় এটি আপনার আশা পূরণ করতে পারে আবার আপনাকে আশাহতও করতে পারে। এ ব্যাপারে চেন্নাই এর অ্যাপোলো স্পেক্ট্রা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট কসমেটিক সার্জন ডা. কে রামচন্দ্রন প্লাস্টিক সার্জারি ও বোটক্স (ঔষধ প্রয়োগ করা) কিছু তথ্য দিয়েছেন যা প্লাস্টিক সার্জারির পূর্বে অবশ্যই জেনে রাখা উচিৎ।
১। নির্ভরযোগ্য প্লাস্টিক সার্জন ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারি করালে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে
অভিজ্ঞতাহীন শল্য চিকিৎসকের দ্বারা প্লাস্টিক সার্জারি করালে আপনার সৌন্দর্যের হানি হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত সামান্য সংক্রমণের সৃষ্টি হয়ে যদি রক্তপাত শুরু হয় তাহলে তা সারা শরীরেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
পূর্বে কোন অপারেশন হয়ে থাকলে, ধূমপান করার বা ড্রাগ নেয়ার মত অভ্যাস থাকলে এই বিষয়গুলো মিথ্যা বলা উচিৎ নয়। কারণ এগুলো সার্জারির ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। আপনি যদি কোন সমস্যার কারণে ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তাহল তাও আপনার প্লাস্টিক সার্জনকে জানাতে ভুলবেন না। কারণ এই ঔষধ চেতনানাশক এবং নিরাময় প্রক্রিয়ার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৩। বোটক্স ট্রিটমেন্ট সীমা মেনে করা প্রয়োজন
অনেকবেশি বোটক্স ব্যবহার করলে আপনাকে অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রত্যাশার উপরই নির্ভর করে আপনার কতটুকু প্রয়োজন। যে প্লাস্টিক সার্জন আপনাকে বোটক্স ইঞ্জেকশন দেবেন তিনিই বলে দেবেন কতটা করা নিরাপদ।
৪। সব সার্জারি খারাপ নয়
প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে রোগীর চেহারায় পূর্বের চেয়ে ভালো ছাপ আসতে পারে। এতে চিকিৎসকের সাথে দেখা করার সময় প্রতিবারই যে আপনাকে ছুরির নীচে যেতে হবে এমন নয়। মনে রাখবেন রোগীর উদ্দেশ্য অনুযায়ীই চিকিৎসক সার্জারি করে থাকেন।
৫। বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা করা উচিৎ
এই অপারেশনের বিষয়ে রোগীদের ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। এটা কীভাবে করা হয়, সারতে কতদিন লাগে, এর ফলাফল কেমন হতে পারে এই বিষয়গুলো গভীরভাবে জানা প্রয়োজন। যদিও প্রত্যেক সার্জনেরই নিজস্ব উপায় আছে ব্যাখ্যা করার। তিনি যদি সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেন রোগীকে তাহলে রোগীর মনের উৎকণ্ঠা দূর হয় এবং সে সার্জারির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে।
৬। প্রতিটা সার্জারির পর নিরাময়ের জন্য সময় দেয়া প্রয়োজন
বোটক্স ফিলার বা বড় ধরণের অস্ত্রোপচার যেটাই হোক না কেন নিরাময়ের জন্য সময় দেয়া প্রয়োজন। পরিপূর্ণ নিরাময়ের জন্য গড়ে ৩-৬ মাস সময় দেয়া প্রয়োজন।
৭। অস্ত্রোপচারের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়ে যদি না অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা করানো হয়
প্রতিটা অপারেশনেরই নিজস্ব ধরণ এবং ঝুঁকি থাকে। যেকোন অপারেশনের আগেই এর সুবিধা অসুবিধাগুলোর বিষয়ে রোগীর জানা উচিৎ এবং রোগীর ঝুঁকির বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন। যদি মানসম্মত সার্জন না পাওয়া যায় তাহলে অস্ত্রোপচার পরবর্তী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৮। প্লাস্টিক সার্জারি ও কসমেটিক সার্জারি এক নয়
প্লাস্টিক সার্জারির একটি উপবিভাগ হচ্ছে কসমেটিক সার্জারি। একজন প্লাস্টিক সার্জন কসমেটিক সার্জারি সহ বিভিন্ন ধরনের সার্জারি করতে পারেন।
৯। সকল প্লাস্টিক সার্জারির ক্ষেত্রে নিয়মিত ফলোআপে যেতে হয় না
একটি ছোট সার্জারির মাধ্যমেও আপনার কাঙ্খিত ফলাফল পেতে পারেন আপনি। যার কারণে আপনাকে বারবার নয় বরং এক বার সার্জনের কাছে গেলেই হয়। জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস আপনাকে সার্জনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হতে পারে।
১০। সকল অস্ত্রোপচারেই ঝুঁকি আছে
চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নতি হলেও সকল সার্জারির ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়। যেকোন সার্জনের সার্জারি শুরু করার পূর্বে এর ঝুঁকি ও উপকারিতার বিষয়ে হিসাব করা প্রয়োজন। অদক্ষ সার্জনের দ্বারা সার্জারি করালে খারাপ ফলাফল আসার সম্ভাবনাই বেশি, তাই সব সময় সার্টিফাইড সার্জন এর দ্বারা করানো উচিৎ সার্জারি।
সূত্র: দ্যা হেলথ সাইট
বিডি-প্রতিদিন/২৩ মে, ২০১৭/ওয়াসিফ