২০ নভেম্বর, ২০১৭ ১৬:৫১

মাদকের হাত থেকে রক্ষায় যে ৫ পদ্ধতি ব্যবহারে সফল আইসল্যান্ড

মাহবুবুল আলম

মাদকের হাত থেকে রক্ষায় যে ৫ পদ্ধতি ব্যবহারে সফল আইসল্যান্ড

আশি এবং নব্বইয়ের দশকে নর্ডিক রাষ্ট্র আইসল্যান্ডের কিশোর-কিশোরীরা বেপরোয়া জীবনযাপন করতো। কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। ১৯৯৮ সালে এক জরিপে দেখা যায়, দেশটির ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ৪২ শতাংশ মাদক গ্রহণ করে। কিন্তু বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের জন্য যেখানে মাদক নেওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেখানে এমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিনএজদের মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য বাহবা পেতে পারে আইসল্যান্ডের সরকার। তাই এখন আপনার মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে কিভাবে এটা সম্ভব হলো? হ্যাঁ, অবশ্যই একটা পরিকল্পনা নিতে হয়েছিল দেশটির সরকারকে। পাঁচটি পদ্ধতি প্রয়োগে এই সফলতা এসেছে।

১. 'কারফিউ' জারি করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, ১৬ বছরের নিচের বয়সীদের রাত ১০টার মধ্যে ঘরে থাকতে হবে। অর্থাৎ কোনো অবস্থাতেই তারা রাত ১০টার পর ঘরের বাইরে আসতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলেই ছিল শাস্তির ব্যবস্থাও। এছাড়া এই আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য কিছু অভিভাবকও দল বেঁধে রাস্তায় বের হয়ে পাহারা দেন। 

২. সন্তানদের পিতা-মাতা একটি অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছিল। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের আচার-আচারণের ওপর বিধি-নিষেধের বিষয়ে সম্মত হয়। যেমন- বাচ্চাদের অ্যালকোহল গ্রহণ করতে পারবে না এবং তারা পরিবারের সঙ্গে অধিক সময় ব্যয় করবে ইত্যাদি। এই বিষয়ে হায়দার ও অ্যালেকসান্দ্রা নামের এক দম্পতি বলেন, ''আমাদের তুলনায় বর্তমানে সন্তানদের শৈশবকাল নিয়ে আমরা অনেক বেশি রক্ষণশীল। আমরা মনে করি, অতীতে আমরা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেছি। তখন মানুষ সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি ও বিপদ নিয়ে সচেতন ছিল না।''

৩. কিশোর-কিশোরীদের জীবন শৃঙ্খলার আওতায় আনা। এজন্য প্রতি বছর একজন টিনএজের স্কুল পরবর্তী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য ৫০০ মার্কিন ডলার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই অর্থ তাদের স্কুল ছুটি হওয়ার পরপরই খেলাধুলায় প্রশিক্ষণের পেছনে ব্যয় করার কথা বলা হয়। এই পদ্ধতিতে শুধু কিশোররা নয়, কিশোরীদের খেলাধুলায় নামানো হয়। এর ফলে মেয়েরাও ফুটবল খেলা শুরু করে। এবং আশ্বাহরণ দেশটির একটি জনপ্রিয় খেলায় রূপ নেয়।

৪. টিনেজারদের ওপর জরিপ চালানো। এজন্য তাদের প্রতি বছর সার্ভে ফর্ম পূরণ করতে হবে। আর এর মধ্য দিয়ে তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক পরিমাপ করা সহজ হয়ে যায়। জরিপে সহকর্মী ও পরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করা হয় এবং জানতে চাওয়া হয়, তারা কেমন অনুভব করছে। তারপর প্রত্যেক কমিউনিটির জন্য একটা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এর ফলে টিনএজদের জন্য কি করা দরকার তার এক সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়।

৫. প্রাপ্ত গবেষণার ফল নিয়ে টিনএজদের জীবনকে কিভাবে আরও উন্নত করা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করা। এজন্য জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য টিএনএজদের পিতামাতার সঙ্গে, যুব ক্লাব ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়। এবং কিশোর-কিশোরীদের মতামত তাদের জানানো হয়। একই সঙ্গে তাদের এটা মনে করিয়ে দেওয়া যে টিনএজরা মাদক গ্রহণ করতে চায় না। তারা সুখী এবং সুস্থ জীবন চায়। আর এইসব পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে আইসল্যান্ডের যুবক ইউরোপের ৩৫টি শহরের মধ্যে এখন রোল মডেল। সাফল্য এসেছে সঙ্গীত ও খেলাধুলায়। যারই ফলাফল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠা।

 সূত্র : বিবিসি

বিডি-প্রতিদিন/২০ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

সর্বশেষ খবর