১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৩:৫২

মেজাজেই লুকিয়ে রয়েছে আসল রোগ!

অনলাইন ডেস্ক

মেজাজেই লুকিয়ে রয়েছে আসল রোগ!

শান্ত স্বভাব হঠাৎ করেই অশান্ত। মুড বা মেজাজের এই ওঠা পড়া আসলে একটি অসুখ। যার নাম, বাইপোলার ডিসঅর্ডার। মেজাজ দিয়ে অনেকটা পরিচয় পাওয়া যায় বাইপোলারে।
এই অসুখে কী হয়?
বাইপোলারের অর্থ দুটি পোল বা দুটি মেরু। মন ও মেজাজের দুটি দিক হল বাইপোলার। যার এক মেরুতে থাকে উচ্ছ্বাস, অনাবিল আনন্দ নিয়ে লাগামহীন বেপরোয়া মন। যাকে বলা হয় ম্যানিক ফেজ বা এই অবস্থার নাম ম্যানিয়া। অন্য মেরুতে থাকবে গভীর শূন্যতা, বিষণ্ণতা। অর্থাৎ ডিপ্রেশন ফেজ। মনের এই দুই মেরু নিয়ে যার দিন যাপন, সে-ই বাইপোলার। অর্থাৎ কখনও ডিপ্রেশন বা অবসাদগ্রস্ত, কখনও আবার চরম মেজাজি রণংদেহি মূর্তি।

মেরু এক:
ম্যানিক ফেজে যখন কেউ থাকবে তখন তাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন।
চোখে পড়ার মতো ব্যবহারের হঠাৎ পরিবর্তন।
হঠাৎ করেই সব কাজে এনার্জি খুব বেড়ে যাওয়া।
নিজেকে বিরাট কিছু মনে করা।
হঠাৎ প্রচুর খরচের ঝোঁক।
খুব বেশি কথা বলা।
কেনাকাটা, দান করার প্রবণতা বৃদ্ধি।
ঘুমের চাহিদা খুব কমে যায়।
খুব রেগে যাওয়া, রেগে গিয়ে জিনিস ভেঙে ফেলা, অন্যকে আঘাত করা।
রাগ বা জেদকে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা থেকে অন্যের উপর সে শারীরিকভাবে আঘাতও হানতে পারে।
কারও এমন লক্ষণ হঠাৎ করেই ১-২ বার দেখা গেলেই সতর্ক হতে হবে।

মেরু দুই:

কোনও কিছুই ভাল না লাগা, শূন্যতা।
ভাল ঘটনাতেও আনন্দ, ফুর্তি নেই।
খুব কান্না পাওয়া।
বেঁচে থাকার ইচ্ছা কমে যাওয়া, অপরাধবোধ কাজ করা, আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের সঙ্গে মিশতে ভাল লাগত, তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভাল না লাগা।
যেসব পছন্দের জিনিস আগে আনন্দ দিত, তা পেয়েও কোন সুখ, শান্তি ও আনন্দ না পাওয়া।
নিজেকে সমাজ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা।
খুব ঘুম পাবে অথবা ঘুম হয়তো আসতেই চাইবে না। ঘুম থেকে উঠলেও কোনও এনার্জি না পাওয়া, ক্লান্তি ভাব।
খিদে কম, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার লক্ষণ থাকলে সতর্ক হতে হবে।
২ সপ্তাহ ধরে এই ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই তা বাইপোলার ডিপ্রেশন বা মেজর ডিপ্রেশনের লক্ষণ হবে।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কারণ: এই মনোরোগে ব্রেনের ভূমিকা কতটা তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। জিন গঠিত কারণ অনেকাংশে দায়ী। পরিবারে কারও অবসাদ, খুব রাগ এই ধরনের সমস্যা থাকলে সরাসরিভাবে যুক্ত পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বাইপোলার ডিসঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা ৪০-৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাবা-মায়ের বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকলে বাইপোলার বা যে কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে সন্তানেরও প্রায় ৪০ শতাংশ রিস্ক থাকে। ১৫-৫০ বছর বয়সের মধ্যে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে এই রোগে।

ওষুধের পাশাপাশি জরুরি: হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলুন। পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। ব্রেনের কাজ ঠিক রাখতে
বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া চলবে না। ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন, মিনারেলের উপযুক্ত জোগান জরুরি। প্রচুর শাক সবজি, ফল খেতে হবে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। নিউরো কেমিক্যালের মাত্রা ঠিক রাখতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। অ্যালকোহল ব্রেনের ক্ষতি করে, তাই মদ বাদ। নিয়মিত শরীরচর্চা জরুরি। রোজ প্রাণায়ম বা মেডিটেশন করুন। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ যেমন, সাঁতার, হাঁটা, দৌড়নো সপ্তাহে ৩-৪ দিন। তাহলে ব্রেনের নিউরোন ঠিকমতো উদ্দীপিত হয়। যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর