শিরোনাম
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৫:৫৩

মলত্যাগের ব্যথা : এনাল ফিসার

ডা. এসএমএ এরফান

মলত্যাগের ব্যথা : এনাল ফিসার

প্রতীকী ছবি

নাসিরউদ্দিন সাহেব অফিসে এসেই খুব সমস্যায় পড়েছেন। এ সমস্যার কথা তিনি না কাউকে বলতে পারছেন, না সহ্য করতে পারছেন। সেটি হচ্ছে তার পায়ুপথের ব্যথা। বেশ কিছুদিন ধরে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই মলত্যাগের পর তার পায়ুপথে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, আর এ ব্যথা থাকে সারা দিন। এর সঙ্গে যায় মলে রক্ত, এতে তিনি না কাজে মন দিতে পারেন, না পারেন ঠিকমতো বসতে। অথচ বিষয়টি এমন যে কারও সঙ্গে আলোচনাও করা যায় না। আর এভাবে  নাসির সাহেবের রোগ আরও বাড়তে থাকে।

তার পায়ুপথের যে সমস্যা হয়েছে এর নাম হচ্ছে এনাল ফিসার, সহজ বাংলায় গেজ। এ এনাল ফিসার কি? খুব সহজ ভাষায় এনাল ফিসার হচ্ছে পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়া, কোষ্ঠ অস্বাভাবিক কঠিন হলে, তাড়াহুড়া করে টয়লেট করতে গেলে কিংবা টয়লেটের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে পায়ুপথ ছিঁড়ে যেতে পারে। পায়ুপথের মিউকোসা বা আবরণী অতি সংবেদনশীল হওয়ায় পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়ার পর ব্যথা হয়। এ ব্যথা কারও তীব্র কারও হালকা হয়। এ ব্যথা পিনের খোঁচার মতো, ব্লেড দিয়ে কাটার মতো হয়। মলের সঙ্গে যায় রক্ত। আবার কারও পায়ুপথে জ্বালা করতে থাকে। কখনো কখনো চুলকানি হয়, মনে হয় ক্রিমি হয়েছে। এ ব্যথার জন্য রোগী টয়লেট করতে ভয় পান। ফলে কোষ্ঠ আরও বেড়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে টয়লেট করতে গেলে আবার তীব্র ব্যথা, রক্তপাত হয়। চক্রাকারে এ সমস্যা চলতে থাকে। ক্রমান্বয়ে পায়ুপথ বেশ সঙ্কুচিত হয়ে যায়, তখন মলত্যাগের সময় তেমন আর ব্যথা করে না, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক বেড়ে যায়, অনেকক্ষণ টয়লেটে বসে থাকতে হয় আর কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না। 

এ ‘টয়লেট বিড়ম্বনার’ কারণে অনেকের চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। বিয়েবাড়িতে দাওয়াত ইত্যাদি এড়ানোর চেষ্টা করেন। এ রোগের রোগীদের এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এ রোগ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি শরীরের অন্য সাধারণ রোগের মতোই একটি রোগ। আমাদের যেমন জ্বর-সর্দি হতে পারে তেমনি পায়ুপথের রোগও হতে পারে। এনাল ফিসার রোগের চমৎকার চিকিৎসা আছে এবং সেই চিকিৎসা নিয়ে সারাজীবন সুস্থ থাকা যায়। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু স্থানিক ওষুধ বা মলমজাতীয় ওষুধ দিয়ে এ রোগ ভালো করা যায়। আর রোগ যদি অগ্রসর হয়ে যায় বা পুরনো হয়ে যায় তাহলে একটি অপারেশন করতে হয়। অপারেশন শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বর্তমানে এ অপারেশন এত সহজ হয়ে গেছে যে রোগী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফিরে যান, স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন এবং একদম স্বাভাবিক ভালো টয়লেট করেন। তাই যথাসময়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকা জরুরি। কারণ কে না জানে ‘সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়’।  

অধ্যাপক, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন:০১৮৬৫৫৫৫৫১১

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

সর্বশেষ খবর