নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ চুল। সেই চুলকে ঘন ও কালো দেখাতে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা। আর চুলের পরিচর্যা বাঙালি নারীর জীবনচর্চার এক অনুষঙ্গ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্য, জড়িয়ে আছে রুচি আর আভিজাত্য। আর চুলের পরিচর্যা নিয়ে নারীদের মনে রয়েছে একটি নিজস্ব জগৎ, যা বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহ কিংবা ঘনঘোর বর্ষা; আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে ঝরে পড়ে চুল। হারায় স্বাভাবিক কালো রং। এ সময়টাতে ঘন কালো চুল পেতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবেই।
চুলের পরিচর্যায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ঘরোয়া টোটকা। এসব টোটকায় রয়েছে মেহেদিপাতা, ডিম, অ্যালোভেরা, নিমপাতা, লেবুর রস, মধু, অলিভ অয়েল, কলা, ক্যাস্টার অয়েল, টক দই, আমলকী, জবা ফুল, বিভিন্ন মসলা, ফল, সবজি, রসুন-পিঁয়াজ ইত্যাদি। এগুলোর আবার একেকটির একেক রকম কাজ। কোনোটি চুল কালো ও উজ্জ্বল করে, কোনোটি চুল করে মসৃণ, কোনোটি আবার চুল গজায় তো কোনোটি চুল পড়া রোধ করে।
একবিংশ শতকে চুলের যত্নে ভেষজ দ্রব্যের ব্যবহার যেমন হয়ে থাকে, তেমনি হয়ে থাকে রাসায়নিক দ্রব্যে তৈরি পণ্যেরও। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার কালার, হেয়ার কাট। তবে চুলের যত্নে রাসায়নিক দ্রব্যের চেয়ে মানুষ সম্ভবত ভেষজ দ্রব্যের প্রতিই বেশি আস্থাশীল। যা-ই ব্যবহার করা হোক- ঘন কালো চুলের আকাক্সক্ষা সব নারীরই আছে। নিয়ম মেনে চললে মিলবে কাক্সিক্ষত ফল।
বর্ষা মৌসুমের স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র আবহাওয়ায় একদিন অন্তর তেল দেওয়া ঠিক নয়। চুল যদি শুষ্ক প্রকৃতির হয় তাহলে সপ্তাহে একবার তেল ম্যাসাজ করাই যথেষ্ট। স্বাভাবিক কিংবা তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহে একবার চুলে তেল দিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করলে খুব অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু নিয়ে চুল এবং স্ক্যাল্প পরিষ্কার করুন। শেষবার চুল ধোয়ার সময় অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলে জেল্লা আসবে।
দুই থেকে তিন মাস অন্তর একবার চুল ট্রিম করাতে পারেন। শুধু চুলের আগার খানিকটা অংশ কাটুন। এতে দৈর্ঘ্য বিশেষ কমবে না, আগা ফাটা সমস্যা থাকলে কমে যাবে। এ ছাড়া প্রতিদিন রাতে নন-অয়েলি হারবাল হেয়ার টনিক লাগাতে পারেন স্ক্যাল্পে। সারা রাত রেখে দিন। নিয়ম করে খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমও খুব জরুরি। মনে রাখবেন, শরীর সুস্থ থাকলে তবেই ত্বক এবং চুল ভালো থাকবে।
অন্যদিকে, চুল লালচে বা বাদামি হওয়ার কারণ অনেকের ডায়েটে প্রোটিনের পর্যাপ্ত অভাব। অতিরিক্ত রোদ থেকেও অনেকের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হতে পারে। সব সময় চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খেতে। নিয়মিত শাকসবজি, ডিম, মাছ, চিকেন, ডাল, টক দই, পনির ইত্যাদি খেতে পারেন। আর রোদে বের হলে চুলে স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন, যাতে সরাসরি রোদ না লাগে। এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে গরম পানির ওপর পাত্রটি রেখে হালকা গরম করে নিন। সপ্তাহে অন্তত একবার এই তেলের মিশ্রণ চুলে লাগান। পরদিন সকালে ভালো করে ধুয়ে নিন।
ঘরোয়া টোটকা
চুলের গোড়া শক্ত করে ক্যাস্টর অয়েল। ফলে চুল হয় ঘন। ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে চুলের গোড়া এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। ঘণ্টাখানেক রেখে ধুয়ে ফেলুন।
মেথি চুল ঘন ও কালো করে। সে জন্য আগের রাতে পরিষ্কার পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে মেথির দানা পিষে নিন। মেথির পেস্টটি চুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন আধা ঘণ্টার মতো। এরপর শ্যাম্পু করে নিন।
মেথি এবং রসুন। এই দুটি জিনিস ব্যবহার করতে হবে সরষের তেলের সঙ্গে। রাতে কয়েকটি মেথির বীজ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে তার সঙ্গে রসুনের একটি বা দুটি কোয়া মিশিয়ে নিয়ে থেঁতো করে নিন। তার পরে এতে হালকা গরম সরষের তেল মেশান। এই পেস্ট মাথায় লাগান। আধ ঘণ্টা রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ