বর্ষাকালে বৃষ্টির স্পর্শে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ব্যস্ত নগরী। তবে আমাদের ব্যস্ততা থেমে থাকে না। বিভিন্ন প্রয়োজনে, কারণে-অকারণে বাইরে বের হতেই হয়। এ মৌসুমে বাইরে বেরোনোর সময় কোন ধরনের পোশাক উপযুক্ত হবে, তা নিয়ে আমাদের সবাইকে কমবেশি একটু চিন্তায় পড়তে হয়। তবে একটু বুঝেশুনে পোশাক নির্বাচন করলে এ ঝামেলা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে
বর্ষা মৌসুমে ছাতা- বৃষ্টি থেকে মাথা আড়াল করলেও জামাকাপড় তো প্রায়শই ভিজে যায়। আর ভেজা জামা নিয়ে অনেক সময়ই অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এদিকে বৃষ্টিকে তো আটকানো সম্ভব নয়, তবে এই সময় একটু চিন্তা করে কাপড় বাছাই করলে ঝামেলা কিছুটা এড়ানো সম্ভব। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সুতির কাপড় সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক। তবে বৃষ্টিতে সুতি কাপড় ভিজলে সহজে শুকাতে চায় না। তাই সুতি কাপড় এড়িয়ে জরজেট, সিল্ক ধরনের সিনথেটিক কাপড় পরা ভালো।
বর্ষাকালে রাস্তার কাদাপানি থেকে রেহাই পেতে একটু কম দৈর্ঘ্যরে পোশাক পরাই ভালো। মেয়েদের জন্য স্কার্ট আর ডেনিম বা সুতির থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এ ঋতুতে সুবিধাজনক ও ফ্যাশনেবল পোশাক। মিডি ড্রেস বা ছিমছাম কো-অর্ড স্কার্ট-টপও এ ঋতুতে বেশ ট্রেন্ডি। সব সময়ের ক্যাজুয়াল লুকের জন্য টি-শার্ট, প্রিন্টেড ঢিলেঢালা শার্ট ও লুজ প্যান্ট বেশ মানানসই। এ ছাড়া গ্ল্যামারাস লুক পেতে কাফতান, টিউনিক ও জমকালো অথচ হালকা ফেব্রিকের ড্রেস এ ঋতুতে বেশ আকর্ষণীয় দেখাবে।
দেশি ফ্যাশন ঘর ‘বিবিয়ানা’র লিপি খন্দকার বলেন, ‘যারা শাড়ি পরে থাকেন তাদের জন্য এই মৌসুমে পাতলা সিল্ক এবং মসলিনের শাড়ি ভালো। আর যারা সালোয়ার কামিজ পরেন তারা ঢিলেঢালা সুতি বা সিনথেটিক কাপড়ের কামিজ পরতে পারেন। এ সময় লম্বা ধরনের কামিজ না পরে একটু শর্ট টপস, ফতুয়া বা কুর্তা পরলে বেশি ভালো লাগবে।’
যাদের সিনথেটিক কাপড়ে সমস্যা হয় না তারা হালকা সিল্ক, সিফন, জরজেট ইত্যাদি কাপড় পরতে পারেন। এতে কাপড় ভিজে গেলেও তা বোঝা যাবে না। আবার তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যাবে। আর যে ধরনের কাপড়ই পরা হোক না কেন, এ সময় একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরা ভালো। এতে বৃষ্টিতে ভিজলেও কাপড় গায়ের সঙ্গে লেগে দৃষ্টিকটু লাগবে না।’
বর্ষায় পোশাকের রং
বর্ষায় পোশাক নির্বাচনের সময় পোশাকের জন্য উপযুক্ত রং বাছাইও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পোশাকের রঙের স্থায়িত্বের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। বর্ষায় মেঘলা প্রকৃতির সঙ্গে উজ্জ্বল রং বেশি মানানসই। এই যেমন রয়েল ব্লু, অলিভ শেড, আকাশি, ধূসর বা হলুদ রং এ সময় খুব ভালো লাগে। তবে এ মৌসুমে একটু গাঢ় রঙের পোশাক পরাই ভালো, যাতে কাদা লাগলে বা ভিজে গেলেও চট করে চোখে ধরা না পড়ে। বর্ষাকালে সাদা কাপড় পরতে বেশ বেগ পেতে হয়। আবার এ সময় একরঙা কালো কাপড়ও পরা উচিত নয়। কালো কাপড় ভিজে গেলে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়, সাদা কাপড়েও ফাঙ্গাস বা ছিট পড়ার আশঙ্কা থাকে। বর্ষায় অনেকেই নীল বা সবুজ রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। তবে এটা অবশ্যই আপনার রুচি ও পছন্দের ওপর নির্ভর করবে।
বর্ষা মৌসুমে ফেব্রিক
আমাদের দেশের মতো গরম আবহাওয়ার বর্ষাকালের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও আরামদায়ক ফেব্রিক হচ্ছে কটন। বর্ষার মেঘলা দিনে বা একপশলা বৃষ্টির পর গুমোট গরমে পাতলা সুতির পোশাক স্বস্তি এনে দেয়। তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সব সুতি কাপড় দ্রুত শুকাতে চায় না বলে কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে জর্জেট, শিফন- এ ধরনের সিনথেটিক কাপড় পরতে পারেন। এ ছাড়া এ ঋতুতে বেছে নিতে পারেন মলমল ফেব্রিক। সুতির থেকেও নরম ও হালকা হয় মলমল। সুতিতে আরামদায়ক পোশাক ও ক্যাজুয়াল লুক পেতে প্রিন্টেড টি-শার্ট দিয়ে সিগারেট প্যান্ট বা ডেনিম প্যান্ট পরতে পারেন। এ ছাড়া কটন কুর্তি ও লেগিংসও বেছে নিতে পারেন।
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়েই বেরোতে হবে যার যার কর্মক্ষেত্রে। বৃষ্টি বলে তো আর থেমে থাকবে না অফিস বা পার্টি। তাই সাজেরও প্রয়োজন আছে। বৃষ্টি ও কাদায় সাজ-পোশাক যেন মাটি না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্ষায় সাজসজ্জার টিপস কেমন হবে জানা যাক-
► আজকাল মেকআপ ছাড়া কোথাও বের হওয়া যায় না। কিন্তু বৃষ্টির দিন মেকআপ যত কম করা যায় ততই ভালো। এ সময় মেকআপ রাখা উচিত হালকা ও সাদামাটা। বাজারে ভালো ভালো ব্যান্ডের ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করাই উত্তম। বর্ষাকালে ভারী মেকআপ নেবেন না। পাশাপাশি লিকুইড লিপ কালার এড়িয়ে চলুন।
► বর্ষাকালে হেয়ার স্টাইল সাধারণ রাখুন। কারণ, বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দারুণ সব হেয়ার স্টাইলের বারোটা বেজে যাবে। যদি চুল কাটার কোনো প্ল্যান থাকে, তাহলে এটাই উপযুক্ত সময়। বর্ষাকালে ছোট চুল সামলে রাখা অপেক্ষাকৃত সহজ। অন্যদিকে বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চুলে ব্লো-ড্রায়ার বা স্ট্রেটনার চালিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, বাতাসের আর্দ্রতায় চুল আগের মতো হয়ে যাবে কিছুক্ষণ পরেই।
► বৃষ্টির দিনগুলোতে উপযুক্ত জুতার খুব প্রয়োজন। পানিতে নষ্ট হবে না, পিছলে যাবে না এরকম জুতা অবশ্যই কিনে নেবেন। কেডস বা রাবারের ফ্ল্যাটস এই ক্ষেত্রে বেস্ট। এ ছাড়া বুটস তো এখন তারুণ্যের ফ্যাশনেরই অংশ। আর বর্ষার মন খারাপ করা মুডটাকে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে জুতায় উজ্জ্বল রং বেছে নিন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল