রূপচর্চা কেবল পার্লার, স্পা অথবা দামি প্রসাধনে আবদ্ধ নয়। জৌলুসহীন ত্বক বা রুক্ষ চুলের যত্নে যে এসবের বিকল্প আছে, তা কখনো ভেবেছেন? আর সেগুলো যে মৌসুমি কিংবা ১২ মাসের ফল, তা অনেকেই খেয়াল করেন না। আপেল, কলা, তরমুজ, পেঁপের মতো সাধারণ ফল দিয়ে ত্বক ও চুলের নানা সমস্যার সমাধান করতে পারেন সহজে...
রূপচর্চার কথা বললেই মাথায় আসে পার্লার বা কেমিকেল সমৃদ্ধ কসমেটিক্স ব্যবহার করার কথা। তবে এর বিকল্পও আছে, তাও সাধারণ ফলে। অর্থাৎ যে ফলটা খাচ্ছেন তার এক টুকরো মুখে ঘষে নিলেন অথবা কোনো ফলের বাটা কিছু অংশ মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করলেন। দেখবেন ফ্রেশ লাগছে। ত্বক ও চুলের সমস্যা অনুযায়ী কোন ফল উপযোগী, সেসব ফল নিয়ে রইল আজকের আয়োজন...
আপেল
আপেল শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি কাজের রূপচর্চায়ও। এটি শরীরের পানির অভাব দূর করে। এর ভিটামিন সি, যা চামড়া টানটান করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিএজিং উপাদান ত্বকের বলিরেখা কমায়। একটা আপেল বেটে নিন। এক টেবল চামচ ওটমিল, এক চা-চামচ মধু, এক চা-চামচ লেবুর রস এবং সামান্য ময়দা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। কেবল বলিরেখা নয়, চোখের নিচে কালো দাগও দূর হবে। অর্ধেক আপেল বেটে নিন। তাতে দেড় চা-চামচ লেবুর রস, সামান্য শসার রস, একটা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশাতে পারেন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বক হবে কোমল ও মৃসণ।
কমলালেবু
কমলালেবু যেমন ক্লিনজার হিসেবে দারুণ, তেমনি ত্বকের ময়েশ্চার ব্যালেন্সও বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে আছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম ও মিনারেলস। যা ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর কমলালেবুর রসের সঙ্গে গোলাপজল ও মধু মিশিয়ে তুলোয় করে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ভেজা তুলো দিয়ে মুছে নিন। এতে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। ত্বকের রুক্ষভাব কমে ত্বক হবে কোমল ও মোলায়েম। একটি কমলালেবু চটকে নিন। সঙ্গে সামান্য দই মিশিয়ে মুখ লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। সানট্যান বা রোদে পোড়া ভাব কমে আসবে। কমললেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক টেবল চামচ দই ও সামান্য চালের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এটা স্ক্র্যাবার হিসেবে দারুণ।
স্ট্রবেরি
শুষ্ক, তৈলাক্ত বা স্বাভাবিক- সব ধরনের ত্বকের জন্যই স্ট্রবেরি কার্যকরী। এর আলফা হাইড্রেক্সিল অ্যাসিড ত্বকের এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করবে। ফলে ত্বকের মরা কোষ ঝরে যাবে। কালো দাগছোপ কমে গিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। কয়েকটা স্ট্রবেরি হাতে চটকে নিন। সঙ্গে সামান্য ফ্রেশ ক্রিম (শুষ্ক ত্বকের জন্য) ও এক টেবল চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। এটি মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মৃসণ। এ ছাড়া সানট্যানের সমস্যাও দূর করতে এটি ভীষণ উপকারী। স্ট্রবেরির সঙ্গে সামান্য চালের গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে মুখ, গলা, কাঁধ ও পিঠে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট পর ঘষে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের সমস্যাতেও এই প্যাক দারুণ কার্যকর।
কলা
কলাতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়োডিন এবং আয়রন। যা ত্বকের এক্সফোলিয়েশনের জন্য দারুণ কাজ করবে। ফলে ত্বকের মৃত কোষ, ধুলো-ময়লা ও দাগছোপ দূর হয়ে যাবে। বিশেষত শুষ্ক ত্বক। পাকা কলা চটকে সঙ্গে ২ টেবল চামচ মধু, ২ টেবল চামচ গ্লিসারিন, ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। ইচ্ছা হলে এর সঙ্গে সামান্য ওটসও মেশাতে পারেন। চুলের জন্য কলা তত ভালো। দুটো পাকা কলা চটকে নিন। সঙ্গে দই, অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে এলে শ্যাম্পু করে নিন। প্যাকটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করবে।
পেঁপে
পাকা পেঁপে ত্বককে সুন্দর রাখতে কতটা উপযোগী, তা অনেকেরই অজানা। এমনকি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে পারে পাকা পেঁপে। এর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি ত্বককে বলিরেখা ও অনুজ্জ্বল থেকে মুক্তি দেয়। পেঁপে টুকরো করে কেটে চটকে নিন। এতে সামান্য দুধ, লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের ক্লান্তি কেটে উজ্জ্বলতা বাড়বে।
শসা
গরমকালে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখাটা খুব জরুরি। আর ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে শসার বিকল্প নেই। একটা শসা কেটে ভালো করে বেটে নিন। দই ও ওটমিলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ভিজে হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। এটির স্ক্রাবার দারুণ। ত্বকের ভিতর থেকে পুষ্টি জোগাবে। চোখের ক্লান্তি ও চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে শসা গোল করে কেটে চোখের ওপর রেখে রিলাক্স করুন। ক্লান্তি কেটে যাবে।
তরমুজ
কয়েক টুকরো তরমুজ সামান্য চটকে নিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর ভেজা তুলো দিয়ে মুছে নিন। ত্বকের জেদি দাগ দূর হবে। তরমুজের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে ও গলায় লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ফেসপ্যাকটি যেমন ত্বককে হাইড্রেট করবে তেমনি স্কিনটোনও লাইট হবে।
আমলকী
আমলকীর রস ও আঙুরের রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। ত্বক উজ্জ্বল হবে। আমলকী চুলের জন্যও খুব উপকারী। শুকনো আমলকী দুধে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। নরম হলে বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক পর শ্যাম্পু করে নিন। চুল পড়া কমবে।
লেখা : ফেরদৌস আরা
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ