মুখের গঠন এবং গায়ের রঙের সঙ্গে যেমন মেকআপের পদ্ধতি, কালার প্যালেট বদলায়, তেমনই চুলের সাজের ক্ষেত্রেও মাথায় রাখুন চুলের দৈর্ঘ্য, ঘনত্বের মতো কিছু দিক। তাই সঠিক হেয়ারস্টাইল বাছার টিপস নিয়ে এ আয়োজন।
সাজগোজ মানেই মেকআপ নিয়ে হাজারও এক্সপেরিমেন্ট! মুখের গঠন, কমপ্লেক্স, চোখের আকার, ঠোঁটের শেপ, সব দেখেশুনে তবে সাজগোজ করতে বসেন। অথচ চুলের সাজের বেলায় এসব কিছুর বালাই নেই। হয় খোলা চুল, না হয় খোঁপা, কিংবা পনিটেল। সঙ্গে বড়জোর ফুলের মালা বা ট্রেন্ডি হেডব্যান্ড, ব্যস। মুখের সঙ্গে তা আদৌ মানানসই হচ্ছে কি না, ভেবে দেখারও প্রয়োজন মনে করেন না। আর যাঁরা এসব ঝামেলায় জড়াতেই চান না, তাঁরা ‘খোলা চুলেই নারীর সৌন্দর্য বাড়ে’ এমন মন্তব্য মেনে নেন। সব সমস্যার ওখানেই ইতি! কিন্তু ভেবে দেখুন তো, সব সময় চুল খোলা রাখাও কি সহজ কাজ? একেবারেই নয়। তবে এক্সপেরিমেন্টটাই বা করবেন কী করে? কারই বা হাতে অত সময় থাকে যে, প্রতিদিন নিত্যনতুন হেয়ারস্টাইলে তা খরচ করবেন? আর শুধু সময়েরই তো কথা নয়, হেয়ারস্টাইলের ট্রেন্ড কোশেন্ট যত বেশি, তার ঝামেলাও তত বেশি। ইন্টারনেট ঘেঁটে, ইউটিউবে হাজারো ভিডিও দেখে তো মুখস্থ করেননি। দেখতে যত সহজ লাগে, আসলে যে কাজটা অতটা সহজ নয়। আর তাই সব দিক বিচার-বিবেচনা করে একঘেয়ে হেয়ারস্টাইলের সঙ্গেই আপস করে নিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কি সমস্যার অভাব! বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় হেয়ারস্টাইল থাকে এক, আর ফেরার সময় রূপ নেয় আর এক। মোট কথা, চুলের সাজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার মতো কঠিন কাজ আর দুটো নেই। সঠিক হেয়ারস্টাইল বাছার টিপস ও চুল ম্যানেজেবল রাখার ট্রিকসের সন্ধান রইল সবার জন্য।
কোন চুলে কোন সাজ
শুধু চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী নয়, হেয়ারস্টাইল বাছার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন চুলের ঘনত্বের দিকেও। সঠিক হেয়ারস্টাইল বাছতে পারলে যেমন চুলের যাবতীয় খুঁত আড়াল করতে পারবেন, তেমনই গোড়ায় গলদ থাকলে চুল সাজাতে গিয়ে হিতেবিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। এ ছাড়া কপালের গঠনের দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি। সব দিক ভেবেচিন্তে তবেই সঠিক হেয়ারস্টাইলটি বেছে নিন।
♦ চুল লম্বা বা মাঝারি এবং ঘন হলে তা বেঁধে রাখার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে হাই বা স্লিক পনিটেল, সাইড বান, আপডু, নানা ধরনের বিনুনি ট্রাই করতে পারেন। চুল খুলে রাখতে চাইলে হাফ আপডু ভালো অপশন। চুল স্ট্রেট করে ব্যাকব্রাশ করেও নিতে পারেন।
♦ চুল ছোট ও ঘন হলে ওয়াটারফল ব্রেড, সামুরাই বান বা হাফ পনিটেল ট্রাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে চুলের টেক্সচার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো। হেয়ার অ্যাকসেসরিজও এড়িয়ে চলুন।
♦ চুল ছোট ও পাতলা হলে হেয়ার পাফ করে নিতে পারেন। ফ্রেঞ্চ বান, সাইড টুইস্টও দেখতে ভালো লাগবে। বিভিন্ন ধরনের হেয়ার অ্যাকসেসরিজও ব্যবহার করতে পারেন। তাতেও চুলের খুঁত অনেকাংশে আড়াল হবে।
♦ চুল লম্বা ও পাতলা হলে ফিশটেল বা পাফি ব্রেডের মতো হেয়ারস্টাইল ট্রাই করতে পারেন। চুল খুলে রাখতে চাইলে ট্রাই করতে পারেন বিচ ওয়েভস। ক্লিক পনিটেল বা বানও পাতলা চুলে এড়িয়ে চলুন।
♦ কোঁকড়া চুলে নানা ধরনের বান দেখতে ভালো লাগে। তবে চাইলে ফ্রেঞ্চ ব্রেড বা সামুরাই বানও ট্রাই করতে পারেন।
♦ কপাল চওড়া বা উঁচু হলে হেয়ার পাফ বা ব্যাকব্রাশ না করাই ভালো। কপাল বড় দেখাবে।
গরমে কেমন হবে চুলের সাজ
যাদের ছোট চুল, তাদের চিন্তার কিছু নেই। তাদের যে কোনো লুকই ভালো লাগে। একদম স্ট্রেইট করে ছেড়ে রাখলে সুন্দর লাগে ছোট চুল। হালকা একটু ব্লো ড্রাইও করে নেওয়া যেতে পারে। আবার হাফ চুল নিয়ে সামনে চিরুনি দিয়ে একটু পাফ করে মাঝে একটা ক্লিপ লাগিয়ে দিলেও বেশ সুন্দর লাগে। ছোট চুলে অনেক রকম স্টাইল খুব সহজেই করা যায়, যেটাতে সময় খুব কম লাগে। আর যাদের চুল বড়, হেয়ার স্টাইল নিয়ে একটু টেনশনে পড়তে হয় তাদের। কারণ চুলের স্টাইল এমনভাবে করতে হবে যেন দেখতেও ভালো লাগে, আবার গরমে অস্বস্তিও না হয়। লম্বা চুল ছেড়ে রাখাটা আপাতদৃষ্টিতে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে বড় চুল ছেড়ে রাখলে সবসময়ই চমৎকার দেখায়। এক্ষেত্রে যেন গরম না লাগে সেজন্য সেরাম ব্যবহার করে স্ট্রেইট করে নেওয়া যেতে পারে চুল। এতে চুল সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং গরমের অস্বস্তি কম হয়। লম্বা চুলের ক্ষেত্রে ব্লো ড্রাই না করাই ভালো। কারণ এতে চুল আরও ফুলে থাকে। বড় চুলের ক্ষেত্রে সাইডে সিঁথি করে ফ্রেঞ্চ বেণির মতো করে নিতে পারেন।
টিপস
♦ চুল সব সময় শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্যানের ঠান্ডা বাতাসে শুকিয়ে নিন।
♦ বাইরে বের হলে প্রতিদিনই শ্যাম্পু করুন। ঘরে থাকলে এক দিন পর পর শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
♦ ভেজা চুল কখনোই আঁচড়াবেন না। এতে চুল পড়া আর ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মোটা ও ফাঁকা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। হেয়ার ড্রায়ার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
♦ মাসে অন্তত দুই দিন সারা রাত তেল দিয়ে রাখুন মাথায়। ঘুমানোর আগে হট অয়েল ম্যাসাজ করুন।
লেখা : ফেরদৌস আরা
বিডি প্রতিদিন/এমআই