২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০৯:৪০

রাস আল খাইমায় ব্যবসার প্রসার ঘটছে তরুণ প্রবাসীদের

কামরুল হাসান জনি, ইউএই :

রাস আল খাইমায় ব্যবসার প্রসার ঘটছে তরুণ প্রবাসীদের

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের একটি রাস আল খাইমা। আমিরাতের অন্যান্য প্রদেশের মত রেমিটেন্স সৈনিকদের কাছে এটিও পছন্দের প্রদেশ। সেখানে বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন জীবিকার তাগিদে যাওয়া প্রবাসীরা। দৈনিক শ্রম বিক্রির পাশাপাশি অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

৬৫০ বর্গ মাইল আয়তনের এ প্রদেশে রয়েছে দাহান, নাখিল, মেরিছ, খরান, জাজিরা, সাহবিয়া, জুলান, রামছ, ডিকডাগ সহ আছে ছোট বড় বাজার। এসব বাজারে ছোট-বড় আকারে প্রবাসীরা গড়ে তুলছেন নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে কনস্ট্রাকশন লাইসেন্স, বিল্ডিং মেইনটেনেন্স, মোবাইল শপ, সুপার মার্কেট, ভেজিটেবল শপ, টাইপিং সেন্টার, কার এক্সেসোরিজ, ট্রেইলারিং, গ্যারেজ, অটো মোবাইল, স্টিল ওয়ার্কশপ অন্যতম। প্রবীণদের পাশাপাশি তরুণ ব্যবসায়ীদেরও এখানে তৈরি হচ্ছে সাফল্য গাঁথার গল্প। 

তবে টানা পাঁচ বছর দেশ থেকে শ্রমিক যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় কিছুটা হিমশিমও খেতে হচ্ছে তাদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমিরাতের দুবাই বা আবুধাবি সিটির মত না হলেও রাস আল খাইমা শহরটি দাঁড়িয়ে আছে দেশটির পুরাতন ঐহিত্য আঁকড়ে ধরে। সমুদ্রে মাছ ধরা এখনো জীবিকা হিসেবে চিহ্নিত অনেকের। পাশ্ববর্তী দেশ ওমানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় পাথরের পাহাড় থেকে কিছুটা দূরে দূরে রাস আল খাইমার জনবসতি ও বিভিন্ন বাজার। আর এসব বাজারকে কেন্দ্র করেই নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যে শ্রম বিক্রি করছেন অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি। দোকান-ঘর ভাড়া ও খরচের পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় এখানে ব্যবসা করার সুযোগ হাত ছাড়া করছেন না তরুণ প্রবাসীরা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় গড়ে তুলছেন নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

মাত্র ছয় বছরে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সুনামের সঙ্গেই ব্যবসা করছেন আল নাসেম কার আপেহালস্টারি এর পরিচালক চট্টগ্রামের মেজবা ভূঁইয়া। রাস আল খাইমায় বসবাসরত তরুণ বাংলাদেশিদের ব্যবসায় সফলতার পেছনের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবীণদের চেয়েও তরুণ প্রবাসীদের অবস্থান অনেকটা ভাল। কারণ তারা দ্রুতই ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে পাশাপাশি ব্যবসার উন্নতির জন্যে ভাল পদক্ষেপ নিচ্ছে। সর্বোপরি, কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতাই তারা এগিয়ে যাচ্ছে এখানে।

মালিকের অধীনে কাজ করা চট্টগ্রামের মিজানুর রহমানেরও ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে মাত্র দুই বছরে। দাহান বাজারে রয়েছে তার আল কাজী টাইপিং এন্ড ফটোকপি নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। নিজের সাফল্যের জন্যে আনন্দিত হলেও ভিসা বন্ধ থাকায় ভিনদেশী শ্রমিক দিয়েই ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে তাকে। তিনি জানান, 'আমি মাত্র দুই থেকে তিন বছর হলো ব্যবসা সঙ্গে জড়িত হলাম। যতটুকু আইডিয়া হলো, তাতে বুঝতে পারছি এখানকার ব্যবসায়িক অবস্থা খুবই ভাল। তবে একটাই সমস্যা, নিজের স্বদেশী কর্মী আনতে পারছি না প্রতিষ্ঠানে। ভিসা জটিলতা কিছুটা বিপাকে রেখেছে আমাদের।'

তরুণ প্রবাসীদের রাস আল খাইমায় ব্যবসায়িক অগ্রযাত্রাকে সফলতা হিসেবে উল্লেখ করে প্রবীণ প্রবাসী আল জীর্নাস ইলেকট্রিক্যাল এন্ড স্যানিটারি কন্ট্রাক্ট্রিং এলএলসির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই যেসব তরুণরা ব্যবসা শুরু করেছে, তারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হবেই। তারা তাদের শ্রম ও মেধা দিয়েই নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তবে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ থাকার কারণে হয়ত তারা সাময়িক কিছু সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। বর্তমানে পাকিস্তান, ভারত ও আফ্রিকা থেকে শ্রমিক এনে ব্যবসা পরিচালনা করছে, ভিসা চালু হলে তারা দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করবে পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের জন্যে আরো বেশি রেমিটেন্স প্রেরণে সক্ষম হবে।

বিডিপ্রতিদিন/ ০২ জানুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর