তড়িৎ ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য নিয়ে জনমনে হতাশার জন্ম দিচ্ছে বলে মনে করেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এবি পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা বলেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের দ্বিধা ও ধীরগতি জনগণের আশাভঙ্গের কারণ হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার কারণে সংস্কার ও সুশাসন নিয়ে জনগণ শঙ্কায় রয়েছে।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এবি পার্টি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাস : কেমন গেল, কেমন যেতে পারতো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব উদ্বেগের কথা জানান নেতৃবৃন্দ। এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ও বিএম নাজমুল হক, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাত উল্লাহ টুটুল, এবি পার্টি উইমেন ইনচার্য ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
সভায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারছি এটা আমার বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা পলায়নের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, যেখানে মানুষ নতুন করে চিন্তা করছে। এখন মানুষ মুক্তভাবে বাঁচতে চায়, চলতে চায়। দেশের শতকরা প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ তরুণ যুবক, তাদের চিন্তাকে ধারণ না করে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো আপনারা মানুষের ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।
সভাপতির বক্তব্যে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রকে মেরামত করা লম্বা সময়ের কাজ, তারপরও অতিদ্রুত এগুলো করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলায় যারা কারাগারে আটকে ছিলেন, তাদের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করেছেন। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্যাসহ নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহোযোগিতা করছি এবং করবো ইনশাআল্লাহ। আশাকরি তারা দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবেন এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একমাসে অনেকেই নানা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। শত শত প্রস্তাব আসছে আসবে কিন্তু সরকারকে ঠিক করতে হবে এই সময়ে দেশ ও দেশের জনগণের মৌলিক প্রয়োজন কি? সেটা নির্ধারণ না করলে সঠিকভাবে আপনারা আগাতে পারবেন না। কোন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ না।
ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকে বলছেন এটা একটা বিপ্লবী সরকার আসলে এটা একটা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার। যেহেতু এই সরকার বর্তমান সংবিধানকে মেনে চলছে। তিনি বলেন, পুলিশ এখনো সক্রিয় হয়নি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে সক্রিয় করার কোন বিকল্প নেই।
কমরেড সাইফুল হক বলেন, গত একমাসে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষের সাফল্য ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার মেনে নিতে পারেনি। তাদের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি, পরাজিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
জোনায়েদ সাকি বলেন, একমাস একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এই সরকারকে বুঝতে হবে জাতির জন্য যে সমস্ত ছাত্র-জনতা অকাতরে জীবন দিয়েছে, তাদের ভূমিকা অনন্য। সেই শহীদদের প্রতি আমাদের কর্তব্য আমরা পালন করছি কিনা? এখনো আহতদের কান্না আমাদের হতবিহ্বল করে। এই সরকারকে অবশ্যই গণহত্যাকারীদের সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যরিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল।
বিডি-প্রতিদিন/শআ