দেশের বর্তমান সংবিধান অনেক বৈপরীত্যে ভরা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারি কক্ষে ‘সংবিধান: ক্ষমতার না জনতার’ শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় রুমিন ফারহানা বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লিখিত রাষ্ট্রধর্ম, রাষ্ট্রপতি, আইন ও বিচার বিভাগ বিষয়েও কঠোর সমালোচনা করেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমাদের সংবিধান অনেক বৈপরীত্যে ভরা। যেমন-সংবিধানের ২ এর (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলা হয়েছে। আবার এই সংবিধানের ৮ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এই ৪টি মূলনীতি আছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে রেখে কিভাবে রাষ্ট্রের মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা করছেন? সমাজতন্ত্রের কথাও বলা হয়েছে। সমাজতন্ত্র তো দূরেই থাক আমরা একটা ন্যূনতম প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদী বা একটা কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারিনি। নতুন প্রজন্মের কাছে আমার হাত জোড় করে অনুরোধ ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রাখবেন, রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের জায়গায়। রাষ্ট্রের সাথে ধর্ম, ধর্মের সাথে রাষ্ট্রকে মেলাবেন না।
এ সময় রুমিন ফারহানা দেশের আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে আমরা চিন্তিত। এটা যদি স্বাধীন না থাকে তাহলে রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র থাকে না। আমরা কিন্তু সেটাই করছি। সংবিধানে বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আবার রাষ্ট্রপতির কার্যত কোনো ক্ষমতাই নাই। তাকে সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করতে হয়। দেশে রাষ্ট্রপতি যারা হন তাদের যোগ্যতা নিয়েও কথা বলার আছে। এর জন্য রাষ্ট্রপতি কে হতে পারবেন তা নিয়ে আগে কথা বলতে হবে।
সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, দেশের সংসদে সবসময় দেখা যায় হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে। আমরা কিন্তু সংসদে না ভোটও দিয়েছি। কিন্তু এ না ভোট কখনো জয়যুক্ত হতে শুনেছেন? শুনেননি। কারণ, না ভোট যদি ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ দেয় তাহলে তার সাংসদ ও দলের পদ থাকে না। এটা পরিবর্তনে সময় এসেছে। এজন্য সবাইকে কথা বলতে হবে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইজার মোহাম্মদ শাওলীনের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন জাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম।
আলোচনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত