জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির ফর্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। সেই ফর্মুলা আপাতদৃষ্টিতে অনেকেই অন্যভাবে ব্যাখ্যা করছেন। পৃথিবীর ৯১টি দেশে সংখানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে জনগণ দলের প্রতীকে ভোট দিবে, কোন ব্যক্তিকে ভোট দিবে না। যেই দল যতো পারসেন্ট ভোট পাবে সেই দল ততো সিট পাবে পার্লামেন্টে। আর পার্লামেন্টে কারা যাবে সেটা ঠিক করে দিবে দল। কোনো চোর, ডাকাত, ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আর পার্লামেন্টে ঢোকার মতো সুযোগ পাবে না যদি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সিস্টেমে এখন কোনো জায়গায় ভোট হলো তিন লাখ। এই তিন লাখ ভোটের মাধ্যমে যিনি ১ লাখ ৫১ হাজার ভোট পাবেন তিনি পাশ করবেন। আর ১ লাখ ৫১ হাজার ভোট নেওয়ার জন্য ওই সিটের মাঝে সবচেয়ে কালো টাকার মালিক যিনি, আর যিনি সবচাইতে বেশি সন্ত্রাসী, যার দাপট বেশি, মাস্তান বেশি, তাকেই দল সেখানে মনোনয়ন দেয় যাতে কেন্দ্র দখল করে ১ লাখ ৫১ হাজার ভোট পেয়ে পাশ করতে পারে। এই সিস্টেম বাংলাদেশের মাটিতে বন্ধ করার জন্য সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তখন দলগুলো তাদের ইস্তেহার জনগণের সামনে তুলে ধরবে। জনগণ যে দলকে পছন্দ করবে সেই দলকেই ভোট দিবে। কারো ভোট মাইর যাবে না। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সবাই পার্লামেন্টে যেতে পারবে পার্সেন্টেজ অনুসারে।
তিনি বলেন, বিষয়টিকে নিয়ে কোনো কোনো সাংবাদিক, কোনো কোনো বন্ধু বলছেন, তাইলে তো আওয়ামী লীগ সিট পেয়ে যাবে। এত ভয় কেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষ অগণতান্ত্রিক আচরণের জন্য, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য আন্দোলন করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, সেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসার মত কোন পরিবেশ আছে? কোন মুখে জনগণের কাছে এসে তারা ভোট চাইবে? তারাতো জনগণের ভোটের সিস্টেমটি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সুতরাং আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন। নির্বাচন দেন পার্সেন্টেজের আলোকে সিলেকশন হোক। শুধু আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমরা এটা দেখছি না, আমরা আগামী ২০ বছরের পরে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি, ১৫ বছর পরে কি হবে সেটা দেখতে পাচ্ছি। এই দেশের রাজনীতিবিদরা সব ভদ্রলোক হয়ে যাবে। সবাই তখন ভোটারদেরকে সম্মান করবে। আমার দল বাঁচাতে হবে না। আর দলওতো চিন্তা করবে খুনিদেরকে বসালে আমার দল আর টিকবে না। এজন্য জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চায়। আমরা বিশ্বাস করি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা যেমন সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছিলো ৯৬ সালে। এই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থাও জনগণ একদিন সমর্থন করবে ও সংবিধানে সন্নিবেশিত হবে। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে।
এসময় আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দোসররা বাংলাদেশ থেকে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে উল্লেখ করে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি হয়। বাংলাদেশ থেকে তাও হয়েছে। দেশটাকে একটা মগের মুল্লুক তৈরি করেছিল। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছি, কারা কারা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করেছে ওয়েব সাইটে আছে, তল্লাশি চালিয়ে প্রত্যেকের নামের তালিকা বের করে টাকাতো আনবেনই, পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারি হিসেবে জনসংখ্যা হল ১৭ কোটি। আর বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। তার মানে যে শিশু আজকে বাংলাদেশে জন্ম নিল তার মাথায় ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হল ঋণ। আমার মনে হয় একজন গ্রামের মানুষ সারা জীবনেও এক লক্ষ টাকা ঋণ নেয় না। অল্পতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু রাষ্ট্রের ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা ঋণের দায় এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার মাথায় আছে। এই ঋণের দায় থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য যারা ঋণ নিয়ে দেশের ডেভেলপমেন্টের নাম নিয়ে দুর্নীতি করেছেন, অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তাদের সবার ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করার পর বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কেয়ারটেকার নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিরে আনতে আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। এই অবদান হচ্ছে শুধু জামায়াতের। শুধু একটি অবদানের জন্যই তো জামায়াতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করার উচিত ছিল। কিন্তু এই সাহসিকতা, দৃঢ়তা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দেখানোর সাহস, হিম্মত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের নেই।
দেশের প্রয়োজনে সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করতে এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জামায়াতে ইসলামী চাপ প্রয়োগ করবে।
দীর্ঘ ১৬ বছর পরে প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার রুকন (সদস্য) সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারী মাওলানা নাজমুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ড. সামিউল হক ফারুকী।
এই রুকন সম্মেলন প্রায় ৬০০ রুকন (সদস্য) অংশ নেন। সম্মেলনের মাধ্যমে রুকনদের সরাসরি ভোটের মধ্যে নতুন আমির নির্বাচিত হবেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক