৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ২৩:১০

অটোয় চড়া ছাপোষা মহেশের কাছে ১৪ হাজার কোটি টাকা!

অনলাইন ডেস্ক

অটোয় চড়া ছাপোষা মহেশের কাছে ১৪ হাজার কোটি টাকা!

সংগৃহীত

খুচরা গুনে প্রতিদিন পয়সা মেটান অটোর। সংসার চলে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধারদেনা করে। কিন্তু আয়কর দেন ৩ লক্ষ টাকার! পেশায় প্রপার্টি ডিলার হলেও জীবনযাত্রায় ছাপোষা। দেখে বোঝার উপায় নেই, তার ঝুলি থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে প্রায় ১৪ হাজার কোটি!

কয়েক মাস আগে মোদি সরকার একটি প্রকল্প চালু করে, যার কাছে যত কালো টাকা আছে ঘোষণা করতে হবে। ধাপে ধাপে কর, জরিমানা দিয়ে পাওনা-গণ্ডা মিটিয়ে দিতে হবে। সেই প্রকল্প বন্ধের মাত্র আধ ঘণ্টা আগে মোদির রাজ্য গুজরাতেই মহেশ শাহ নামের এই প্রপার্টি ডিলার ঘোষণা করেন, তার কাছে রয়েছে ১৩,৮৬০ কোটি টাকা। 

এই ঘোষণার পরই টনক নড়ে আয়কর দফতরের। খবর পৌঁছয় মোদি, অরুণ জেটলির কানেও। এরপর মোদি নির্দেশ দেন, মহেশকে যেন রেয়াত করা না হয়।

৩০ নভেম্বরের মধ্যে কর জমা দেওয়ার ছিল। কিন্তু সে সব না দিয়ে মহেশ হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। শনিবার আত্মপ্রকাশ করেন এক চ্যানেলে। সেখানে দাবি করলেন, সব টাকাই কোন না কোন নেতা বা ব্যবসায়ীর। তার কাছে টাকাগুলি রাখা হয়েছে মাত্র। টেলিভিশন দেখে আয়কর অধিদফতর সেখান থেকেই তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর জেরা করেও কারও নাম বেরিয়ে আসেনি।

গুজরাটের যে হার্দিক পটেল আন্দোলন করে বিজেপির ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এর মধ্যে টুইট করে দাবি করেন, সব টাকা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের। আসরে নামেন অরবিন্দ কেজরীবালও। প্রশ্ন তোলেন, সত্যি হলে অমিত শাহ জবাব দিন। জবাবে বিজেপি পাল্টা প্রশ্ন তোলে, এ টাকা যদি বিজেপিরই কারও হতো, তা হলে বিজেপিরই রাজ্যে বিজেপিরই আয়কর অধিদফতর এতটা সক্রিয় হতো কি? নিজেদের বাঁচাতেই কি বিরোধীরা আগেভাগে বিজেপি নেতাদের দিকে আঙল তুলছেন?

কিন্তু এই সব তর্ক-বিতর্কে যে উত্তর এখনও মেলেনি, সেটা হল যে ব্যক্তি নিতান্ত সাদামাটা ঘরে থাকেন, জীবনযাপন সাধারণ— তার এত কালো টাকা কোথা থেকে এল? 

আয়কর অধিদফতর যে ৬৭ হাজার কোটি কালো টাকার হিসেব দিয়েছে, তাতে রাখা হয়নি মহেশ শাহর অর্থ। যেমনটি রাখা হয়নি মুম্বাইয়ে আব্দুল রাজ্জাক মোহম্মদ সাঈদ ও তার পরিবারের আরও চার জনের দু’লক্ষ কোটির কালো টাকা। কারণ আয়কর অধিদফতরের মনে হয়েছে, এদের ঘোষণায় কোন গলদ আছে।

মুম্বাইয়ের আব্দুল রাজ্জাকের বাড়ির যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেটিও সাধারণ একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং তালা বন্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। ওই নামে সেখানে কেউ থাকেন বলেও জানেন না প্রতিবেশীরা। তার পাশে মহেশ শাহকে অন্তত খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু জেরার মুখে তিনি যে ভাবে প্রতিদিন নিজের বক্তব্য পাল্টাচ্ছেন, তাতে উত্তরের থেকে আরও বেশি প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের নজর থেকে তাকে বাঁচাতে পুলিশের পোশাক পরিয়ে লুকিয়ে মেয়ের বাড়ি পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তবু উত্তর মেলেনি।

আয়কর অধিদফতরের তদন্তকারী অফিসার পি সি মোদির মতে, ‘‘আপাতত মহেশকে প্রাথমিক জেরা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কারও নাম বলেননি। শুধু বলেছেন, পয়সার বদলে কমিশন পেতেন।’’ তবে কারা কমিশন দিলেন, সেই অনুসন্ধান এখনও অব্যাহত রয়েছে।
 

বিডি প্রতিদিন/৬ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর