২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৩:০৭

জন্মের সময় ইমানের ওজন ছিল ৫ কেজি!

অনলাইন ডেস্ক

জন্মের সময় ইমানের ওজন ছিল ৫ কেজি!

ফাইল ছবি

ইমান আহমেদ। জন্ম মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে। বিশ্বের সবচেয়ে স্থূলকায় নারী ছিলেন তিনি। গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৭ বছর বয়সে মারা গেছেন এই নারী। ৫০৪ কেজি ছিল তার শরীরের ওজন। অথচ জন্মের সময় এই ইমানের ওজন ছিল মাত্র ৫ কেজি, ১১ বছর বয়স থেকে বাড়তে থাকে তার ওজন। থাইরয়েড, আলস্যে বন্ধ হয় পড়াশোনা চলুন জেনে নিই ইমান সম্পর্কে এই তথ্যগুলি-

১. জন্মের সময় ইমানের ওজন ছিল প্রায় ৫ কেজি। ১১ বছর বয়সে পা দিতেই ওজন বাড়তে শুরু করে তাঁর। থাইরয়েড জাঁকিয়ে বসে শরীরে। আলস্যে ভুগতে থাকেন। বন্ধ হয় স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা। ধীরে ধীরে পাথরের মতো ভারী হতে থাকে শরীর, হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে হামাগুড়ি দিতে থাকেন।

২. মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার মেয়ে ইমানের ২০১৪ সালে ওজন ছিল ৩০০ কেজি। অত্যধিক ছিল কোলেস্টেরলের মাত্রা। তার ওপর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হন, শরীরের একটি দিক অসাড় হয়ে যায়। কথা জড়িয়ে আসতে থাকে। ক্রমে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দু দশকের বেশি কোথাও বেরুতে পারেননি।

৩. ২০১৬ সালে ওজন বেড়ে ৫০০ কেজি হয়ে যায়। সঙ্গে কী রোগ নেই! লিম্ফেডেমা, ওয়াটার রিটেনশন, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপারথাইরয়েড। কঠিন ফুসফুসের অসুখও ধরে ফেলে তাঁকে, সঙ্গে বাত।

৪. মিশর, গ্রিসের ডাক্তারদের চিকিত্সায় তেমন ফল না পেয়ে ইমানের বোন সাইমা অনলাইনে পরামর্শ চান, প্রখ্যাত ভারতীয় ল্যাপরোস্কোপি সার্জন ডাঃ মুফজ্জল লাকড়াওয়ালার সঙ্গে। চিঠিতে যোগাযোগ করেন।

৫. মিশরের মিস্ত্রীদের বিশেষ ভাবে তৈরি খাটে সারাদিন পরে থাকতেন ইমান। তাঁকে মিশর থেকে ইজিপ্টএয়ারের এয়ারবাস ৩০০-৬০০য় চাপিয়ে মুম্বাই নিয়ে আসা হয়। নিরাপত্তার কারণ চারদিক ঢাকা বিশেষ ট্রাকে ঢোকানো হয় সইফি হাসপাতালে।

৬. কর্তৃপক্ষ ইমানের জন্য গ্রাউন্ড ফ্লোরে নতুন কাঠামো তৈরি করে। তবে প্রয়োজনীয় অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগে সেটি ভেঙে দেয় বৃহন্মুম্বই পৌরসভা। তাই ওখানকার প্রথম তলে ১০০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে বিশেষ কামরা বানিয়ে রাখা হয় তাঁকে। আগে সেখানে ছিল অ্যাকাউন্টস অফিস।

৭. মার্চে বেরিয়াট্রিক সার্জারি করিয়ে তাঁর পাকস্থলীর আয়তন দুই-তৃতীয়াংশ ছোট করে দেন ডাক্তাররা, যাতে খাবার কম যায়। যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৪০ বা তার বেশি বা ৩৫, সেইসঙ্গে স্থূলতা সংক্রান্ত আরও নানা সমস্যা আছে, তাদের এ ধরনের সার্জারি করানো হয় একেবারে শেষ উপায় হিসাবে। তাঁর জেনেটিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে, এমন এক ধরনের বিরল জিনগত বিকৃতি তাঁর মধ্যে রয়েছে যা অস্ত্রোপচার করে সারিয়ে তোলা যায় না।

৮. সার্জারির আগে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। আরও ১০০ কেজির বেশি ওজন ঝরাতে হয় তাঁর।

৯. যদিও অস্ত্রোপচারের পর ইমানের বোন সাইমার ডাক্তারদের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয়। ইমানের ঠিক চিকিত্সা হচ্ছে না বলে সোস্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেন তিনি। ইমানের ওজন কমা নিয়ে ডাক্তাররা মিথ্যা বলছেন। ইমানের তিনটি ভিডিও ছেড়ে দিয়ে সাইমা দাবি করেন, তিন-তিনবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে বোনের, গায়ের রং নীল হয়ে গিয়েছে, কথা বলতে পারছে না। ডাক্তাররা পাল্টা দাবি করেন, চিকিত্সা যেভাবে হবে বলে আগে ঠিক হয়েছিল, সেভাবেই এগুচ্ছে। উল্টো তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের নিষেধ উড়িয়ে ইমানকে জল খাইয়েছেন সাইমা। দুপক্ষের টানাপড়েনে সাময়িক বন্ধ থাকে চিকিত্সা।

১০. অবশেষে সাইমার আবেদন গ্রহণ করে ইমানের চিকিত্সা করতে রাজি হয় আবু ধাবির মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল ভিপিএস হেলথকেয়ার কর্তৃপক্ষ। গত মে মাসে তাদের একটি মেডিকেল ইভ্যাকুয়েশন টিম মুম্বাই এসে ইমানকে বিমানে দুবাই উড়িয়ে নিয়ে যায়। নিয়মমতো সইফি হাসপাতালের ডাক্তাররা তাঁর চিকিত্সা সংক্রান্ত সব নথি ভিপিএসের ডাক্তারদের হস্তান্তর করেন।

১১. মে মাসের শেষে শোনা যায়, ইমানের অবস্থা ভাল হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সেখানকার ২০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে তাঁর দেখভাল করছেন। ২৫ বছরে এই প্রথম ইমান হার্ট অ্যাটাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ডান হাতটি তুলতে পেরেছেন, নিজে খাবার মুখে তুলেছেন বলে জানান তাঁরা।

তবে সবশেষ গত সোমবার বুরজিল হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান, হার্টের অসুখ, কিডনির সমস্যা সহ কোমোরবিড অবস্থার ফলে জটিলতার ফলেই মৃত্যু হল ইমানের।

বিডিপ্রতিদিন/ ২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৭/ ইমরান জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর