শিরোনাম
২১ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৮:৫৩

মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে সেখানে বছরে ১০ কোটি পর্যটক যায়!

অনলাইন ডেস্ক

মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে সেখানে বছরে ১০ কোটি পর্যটক যায়!

সেখানে উত্তেজনা ছড়ায় প্রতি মুহূর্তে। যখন তখন গুলিতে প্রাণপাখি উড়ে যেতে পারে। কিন্তু সৌন্দর্যের পূজারিদের বোধহয় সেই সব শঙ্কা মনে স্থান পায় না। না হলে একটা বাগানের টানে কখনও কাবুলে বছরে ভিড় জমাতে পারে ১০ কোটি মানুষ?

অবশ্য যেমন তেমন বাগান নয়। খোদ বাদশা বাবর তৈরি করেছিলেন। বাগানের নামও বাগ-এ-বাবর। বাবরের বাগান। কাবুল শহরে অবস্থিত এই কুঞ্জবন। বাবরের এই সাধের বাগানকে একবার চোখের দেখা দেখতে কাবুলে প্রতি বছর ভিড় জমায় প্রায় ১০ কোটি পর্যটক। এর মধ্যে যেমন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিদেশি ভ্রমণপিপসুরা।

দেশটির সরকারের হিসাব অনুযায়ী, শুধু প্রবেশ মূল্য থেকেই প্রতি বছর বাগান কর্তৃপক্ষ আয় করে ৩ লাখ মার্কিন ডলার। শের দরওয়াজা পাহাড়ের কোলে নিজস্ব কানন বানিয়েছিলেন বাদশা। প্রায় ১১ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বাগান। বাগানের প্রবেশপথে রয়েছে একটি সরাইখানা। ২০০২ সালে গৃহযুদ্ধের সময় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবু বাবরের স্বপ্ন জিইয়ে, এখনও ভগ্নাংশ দাঁড়িয়ে রয়েছে সরাইখানার। 

বাগান কর্তৃপক্ষের প্রধান আহমেদ শাহ ওয়ারদাক জানিয়েছেন, ওই জায়গায় সাতটি ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যারাভ্যান (পর্যটকদের বহন করা ভ্যান) আসত। তখন তো বাণিজ্য মানে ছিল বিনিময় প্রথা। ফলে সব ক্যারাভ্যানেই জিনিসপত্র বোঝাই থাকত। এই সরাইখানায় এসে গা এলিয়ে বিশ্রাম নিত ব্যবসায়ীরা। তারপর নতুন উদ্যমে আবার কাজে লেগে পড়ত। সামনের খোলা মাঠেই বসত হাট। জিনিসপত্র আদানপ্রদান হত।

৫০০ বছর আগে যখন আফগানিস্তান এসেছিলেন মুঘল বাদশা, তখনই তিনি এই বাগান তৈরি করেন। বাবরের খুব সাধের জায়গা ছিল এটি। দিল্লির দরবারের বসেও তিনি ভুলতে পারেননি নিজের হাতে সৃষ্টি এই কাননের কথা। কাছের মানুষদের তিনি জানিয়েছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাকে কাবুলের সেই বাগানেই সমাধিস্থ করা হয়।

আজও সেই বাগানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন মুঘল বাদশা জাহির-উদ-ইন মহম্মদ বাবর। তার সমাধিক্ষেত্র যেমন বাগানের একটি দর্শনীয় স্থান, তেমনই আরও ছয়টি দর্শনীয় স্থান এখানে রয়েছে। শাহজাহান মসজিদ, বাগানের কেন্দ্রীয় অক্ষ, বাগানের দেওয়াল, সরাইখানা, হারেম ও শাহজাহান দরওয়াজা।

পৃথিবীর সব দর্শনীয় স্থানের মতো এখানেও ট্যুর গাইড রয়েছে। তারা শুধু জায়গা ঘুরিয়ে দেখান না, তারা চান মানুষ এখানকার ইতিহাস সম্পর্কে জানুক। অনেকেই এই বাগান সম্পর্কে জানেন না। শুধু ঘুরে দেখবে বলেই আসে। তাদের কাছে বাবরের কীর্তি ও ইতিহাস জানান গাইডরা।

বাগানের আরও একটি দর্শনীয় জায়গা হলো কোয়াসরে মালাকে (রানির অট্টালিকা)। বছরে প্রায় এক হাজার দর্শক এটি দেখতে আসে। বাগানের দক্ষিণ পূর্ব কোণে এই মহল অবস্থিত। অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে এই মহল ভাড়া দেওয়া হয়। 

জায়গাটি তৈরি করেন আমির আবদুল রহমান খান। ১৮৮০ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানের আমির ছিলেন। অট্টালিকা তৈরির পর তিনি নিজে অনেকদিন এখানে ছিলেন। এখন প্রায় ৮৬ জন কর্মী এই মহল দেখাশোনা করেন।

বিডি প্রতিদিন/২১ জানুয়ারি ২০১৮/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর