১৭ মার্চ, ২০১৮ ০৯:০৮

ছাত্রের মৃত্যু: ডাক্তার নয়, মিস্ত্রি হাজির অ্যাম্বুল্যান্সে

অনলাইন ডেস্ক

ছাত্রের মৃত্যু: ডাক্তার নয়, মিস্ত্রি হাজির অ্যাম্বুল্যান্সে

আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে ভারতের পশ্চিবঙ্গের বর্ধমান থেকে কলকাতা আনা হচ্ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক কিশোরকে। সঙ্গে ছিলেন নার্সিংহোম থেকে পাঠানো এক চিকিৎসকও। পথেই ওই কিশোরের মৃত্যু হওয়ার পরে জানা গেল চিকিৎসক পরিচয়ে আসা ওই ব্যক্তি আসলে শীতাতপ যন্ত্র সারানোর মিস্ত্রি!

বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব যাদবপুরের এই ঘটনায় কিশোরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছেন এসি মিস্ত্রি শেখ সরফরাজউদ্দিন ও অ্যাম্বুল্যান্সের চালক তারাবাবু শাহ। পুলিশ জানিয়েছে, বর্ধমানের নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও অন্যদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, প্রতারণার দায়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বীরভূম নলহাটির নসিপুরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অরিজিৎ কয়েক দিন ধরেই জ্বর ও কোমরের ব্যথায় ভুগছিল। বাবা রঞ্জিত দাস পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় শরীর খারাপ নিয়েই পরীক্ষা দিচ্ছিল অরিজিৎ। কিন্তু ১৪ মার্চ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর তার জ্বর খুব বেড়ে যায়। পরিজনেরা তাকে রামপুরহাট জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতাল সঙ্গে সঙ্গে অরিজিৎকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘রেফার’ করে দেয়।

অরিজিতের মামা শুভেন্দু মণ্ডল জানান, অরিজিৎকে নলহাটি থেকে যে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রামপুরহাট আনা হয়েছিল, তাতে করেই তারা কলকাতার দিকে রওনা দেন। কিন্তু কলকাতায় এলে শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না ভেবে ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের কথাতেই তারা বর্ধমানের অন্নপূর্ণা নার্সিংহোমে অরিজিৎকে ভর্তি করান।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় অরিজিৎকে কলকাতাতেই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুতেই রোগীকে ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না। মামা শুভেন্দু মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করার পরে ওই নার্সিংহোম থেকে বলা হয়, ওর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। কলকাতায় নিয়ে যেতে হলে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে এ রকম অ্যাম্বুলেন্স দরকার। এক জন বড় চিকিৎসকও দেওয়া প্রয়োজন। তারাই ব্যবস্থা করে দেবেন।’’

অভিযোগ, এই ‘ব্যবস্থা’ করতে করতেই বিকেল গড়িয়ে যায়। অরিজিতের পরিবার জানান, তাদের নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে বলা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে সঞ্জয় বিশ্বাস নামের এক জন বড় চিকিৎসক অ্যাম্বুল্যান্সে রয়েছেন! এর বিনিময়ে ১২ হাজার টাকাও নেয় ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।

এর পর আর দেরি না করে ছেলের সঙ্গে আসার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে যান অরিজিতের বাবা, চাচা, এক দাদা ও মামা। কিন্তু অভিযোগ, তখন বলা হয়, পরিবারের কেউ অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে পারবেন না। তাদের জন্য আলাদা গাড়ি ভাড়া করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অরিজিতের বাবা ও জেঠু এক রকম জোর করেই ওই অ্যাম্বুল্যান্সের সামনের আসনে উঠে বসেন। তবে দাদা এবং মামাকে উঠতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তারা বাধ্য হয়ে আলাদা গাড়ি ভাড়া করে কলকাতার পথে রওনা দেন।

অরিজিতের পরিবার জানিয়েছে, কলকাতায় আসার পথে এক বার চালক নেমেছিলেন গাড়ি থামিয়ে। কারণ জানতে চাইলে চালক তাদের জানান, অরিজিতের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়েছিল। তাই তিনি সেটি চালু করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে থাকা চিকিৎসক সেটি চালু করতে পারলেন না কেন, প্রশ্ন করলেও সদুত্তর পাননি অরিজিতের বাবা। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দক্ষিণ শহরতলিতে বাইপাস-সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে অরিজিৎকে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, পথেই তার মৃত্যু হয়েছে!

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর