১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০৬:৫৭

কীসের শখে চাকরি ছাড়লেন এই যুবক?

অনলাইন ডেস্ক

কীসের শখে চাকরি ছাড়লেন এই যুবক?

সংগৃহীত ছবি

চাকরির জন্য শখ ছাড়েন অনেকেই কিন্তু শখের জন্য চাকরি ছাড়তে দেখা যায় কজনকে? তাও আবার ভ্রমণ সঙ্গী নিজের পোষা বিড়ালকে নিয়ে?

রিচার্ড ইষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন৷ গোটা অস্ট্রেলিয়া ঘুরবেন স্লিপার ভ্যানে৷ তবে ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে কোন মানুষকে রাখছেন না তিনি৷ সঙ্গে থাকবে তার পোষা বিড়ালটি৷ উইলো তার খুব পছন্দের পোষ্য৷ দুজনের পারস্পরিক বোঝাপড়াও বেশ জোরালো৷

সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিশ্বের মানুষকে একত্র করেছে এক জায়গায়৷ এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতেও যেমন দেরি হয়নি তেমনি লক্ষ লক্ষ লাইক কমেন্ট পরতেও দেরি হয়নি৷ শুধু তাই নয়, বহু মানুষ রিচার্ডকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন৷ রিচার্ড ও উইলোর বন্ডিং দেখে অনেকেই ভাবছেন এমন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলবেন৷

রিচার্ড চান তিনি ও তার ৬ বছরের বিড়াল উইলো পুরো অস্ট্রেলিয়ার যত রাস্তা আছে একটাও বাদ না দিয়ে শুধু ঘুরেই বেড়াবেন৷ এরপরই বেড়িয়ে পড়েন দুজন৷ তিন বছর পরেও তাদের ভ্রমণ শেষ হয়নি৷ তারা দুই জন মিলে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যান৷ একসঙ্গে মনে গেঁথে রাখার মত সুন্দর জায়গায় মনের আনন্দে বেড়ান৷

এভাবেই একে অপরকে সময় দিয়ে চলেছেন দু'জনে৷ যেখানে কোন দেনা পাওনার হিসাব নেই৷ নেই কোনও বাধ্যবাধকতা৷ সেখানেই মজেছেন তামাম ইন্টারনেট ইউজার্স৷ চাওয়া পাওয়ার হিসাবের বাইরে থেকে এরকম বেহিসাবি ঘুরে বেড়াতে কে না চায়?

এই গল্পের শুরু হয় ২০১৪ সালে৷ সে বছরই বেড়ানোর জন্য আইটির চাকরিটা ছেড়ে দেন ইষ্ট৷ তিনি জানান,  “আমি দশ বছর ওই সংস্থার সঙ্গে চাকরি করেছি৷ তারপরেও আমার প্রতিশ্রুতিময় লাগছিলনা আমার পেশাটি৷ আমি লোকসান করেছি বলে মনে হতে থাকে৷” 

তিনি আরও বলেন, “তখন আমি ভাবি মাস ছয় ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসব৷ কিন্তু সেই একই সমস্যার মধ্যে ফিরতে আমায়৷ এই ভাবনাটা মাথায় আসতে থাকে৷ এরপরই ভাবি নাহ৷ ছ’মাসের বেশি সময় দরকার৷ ছ’মাসে হবেনা৷”

তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার ভকসওয়াগন ভ্যানটি রিমডেল করবেন৷ সেটাকে বাড়ির মত তৈরি করে ফেলতে হবে৷ যাতে থাকবে বাড়ির মত সবরকম সুবিধা৷ তিনি জানান “তারপরেই ভ্যান লাইফের কথা মাথায় আসে৷ আমি নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিই৷ যা কিছু আমি কিনেছিলাম সব বিক্রি করে দিই৷ আমার মাথার মধ্যে ছিল আমি কিভাবে জীবন কাটাব৷ তাই তারপর আমি কম খরচে জীবন যাপন শুরু করে দিই৷”

ইষ্ট তার সব মায়ার জিনিস বিক্রি করে দেন৷ কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি একটি জিনিস৷ তা হল তার পোষ্য বিড়াল উইলোকে৷ উইলোর থেকে আলাদা করে নিজেকে ভাবতে পারেননি ইষ্ট৷ তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি উইলো আমার জীবনের প্লানের মধ্যে ছিল না৷ কিন্তু এটা ঘটে যায়৷ আমি বুঝতে পারি যে উইলোকে পেছনে ফেলে রেখে আমি যেতে পারবনা৷ সে সবসময় আমার পাশে ছিল৷ তাই আমি প্রমিস করি আমি কোনও দিনও তাকে ছেড়ে দেব না৷ এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত৷”

কিন্তু বিষয়টা বলতে যতটা সহজ ঘটানোটা তত সহজ ছিলনা৷ একটা বিড়ালকে ‘ট্রাভেলিং ক্যাট’ তৈরি করা সহজ নয়৷ কারণ সে সারা জীবন ঘরের ভিতরে থেকেছে৷ “যখন আমি ভ্যানটা তৈরি করছিলাম সসময় উইলো অনেকটা সময় আমার সঙ্গে কাটিয়েছে৷ তখন সে বুঝতে পারে এটা তার জন্য নিরাপদ ঘর হবে৷ এবং সে শিখে ফেলে তার ভিতরে থাকা৷” জানান ইষ্ট৷

যদিও তিনি উইলোকে ভ্রমণের পাঠ খুব ধীরে ধীরে পড়িয়েছেন৷ “আমি প্রথমে উইলোকে নিয়ে উইকেন্ড ট্যুরে যেতে শুরু করি৷ তারপর পুরা সপ্তাহ৷ এরপর সে শুধু শিখেই ফেলে না বেড়ানোকে ভালবেসে ফেলে৷” এমনটাই নিজের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন ইষ্ট৷

উইলো ইতিমধ্যেই ট্রপিক অফ ক্যাপ্রিকর্ন পার করে ফেলেছে ছ’বার৷ উইলোর এই ভ্রমণে সবথেকে প্রিয় বিষয় হল বেড়ানোর সময় বিড়ালের ঘুমনোর সবথেকে ভালো জায়গা কোনটা সেটা খুঁজে বের করা৷ ইষ্ট জানিয়েছেন “উইলো সবসময় খুঁজতে থাকে সবচেয়ে ভাল জায়গা কোনটা আর সবথেকে নরম ঘাস কোন মাঠে আছে৷ তবে সে সবথেকে পছন্দ করে ধূলায় গোসল করা৷”

আর কিছু ভাবতে চান না ইষ্ট৷ এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান সময়৷ তিনি ও তাঁর উইলো মিলে যা ইচ্ছে তাই করতে চান৷ সেটাই করে চলেছেন৷ সেটাই করে যাবেন৷ দুজনের এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়৷

 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর