শিরোনাম
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

বিজয় দিবস : বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক

মুসা সাদিক

বিজয় দিবস : বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক

১৯৭১ সালে আমি তখন প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের অধীনে স্বাধীন বাংলা বেতারের ওয়ার করেসপন্ডেন্ট। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এক ফ্রন্ট থেকে অন্য ফ্রন্টে উল্কার বেগে চলাচল আমার। দিলি্লর বিবিসি ব্যুরো চিফ মার্ক টালিকে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের একটি সফল অপারেশন, একটি পাকিস্তানি সেনাদের টহল জিপ বা ট্রাক ধ্বংসের অথবা খান সেনাদের একটি লঞ্চের ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি রকেট লাঞ্চারের শেল নিক্ষেপের সংবাদ না দিতে পারলে সে রাতে আমার ঘুম হারাম হয়ে যেত। স্বাধীন বাংলা বেতারের বার্তা বিভাগে শ্রদ্ধেয় কামাল লোহানী ভাই এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ারুল হক খান অপেক্ষা করে থাকতেন ফ্রন্ট থেকে আমার পাঠানো একটি সফল অপারেশনের খবরের জন্য। তাই যেখানে যুদ্ধ, যেখানে বারুদের গন্ধ, কামানের কান ফাটা শব্দ, সেখানে আমি উল্কার বেগে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো অপারেশনের সংবাদের জন্য ছুটে যেতাম।

পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একটি কমান্ডো হামলার সংবাদ এবং একটি পাকিস্তানি সেনাদের ডিফেন্সে বা ব্যাংকারে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপের বা একটি কালভার্ট বা ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার সাফল্যের সংবাদ আমার চাই-ই চাই। মনে হতো সমগ্র বাঙালি জাতি, সমগ্র বিশ্ব, আমার সংবাদের জন্য কান পেতে অপেক্ষা করে আছে। বহুবার মুক্তাঞ্চল ভেদ করে পাকিস্তানি সেনাদের অবরুদ্ধ অঞ্চলে ঢুকে গেছি শুধু একটি সংবাদের জন্য, এ ছাড়াও শত্রু এলাকার গোপন সামরিক তথ্য সংগ্রহের যে গুরুদায়িত্ব ছিল আমার ওপর সে জন্যও। তখন সব মুক্তিযোদ্ধার মতো আমার চোখের সামনে সব কিছু ছিল অন্ধকার। সব কিছুই ছিল অনিশ্চিত। শুধু নিশ্চিত ছিল স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন চোখে-মুখে এঁকে বহু তরুণ বীর কিশোর আমার চোখের সামনে বহু রণাঙ্গনে চির নিদ্রায় ঢলে পড়েছে। সেই স্বাধীনতার বাঁধভাঙা জোয়ারে একাত্তরের তরুণ-কিশোর-যুবকরা তাদের যৌবনের সবটুকু নিঃশেষ করে শত শত রণাঙ্গনে ফুলের মতো যখন ঝরে ঝরে পড়ছিল, তখন জীবন-মৃত্যু দু'পায়ে দলে বহুবার, বহু রণক্ষেত্রে নিঃশব্দে পাকিস্তানি ব্যুহ ভেদ করে চলে যেতাম পাকিস্তানি ঘাঁটি, ডিফেন্সের সামরিক তথ্য সংগ্রহে। দুঃসাহসিক এ রকম বহু সাফল্যের পর অকস্মাৎ আমার জীবনে দুর্ভাগ্য নেমে আসে ৮ নম্বর সেক্টরের চাঁচড়ায়। যখন আমার জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান ছিল এক সুতার ব্যবধান মাত্র।

মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার সেই পুণ্যময় দিনগুলোর ঘটনার বিষয়ে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, "পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তাকে স্বাধীন বাংলা বেতারের সমর সংবাদদাতা নিয়োগ করা হয়। সংবাদদাতার কাজের পাশাপাশি ফ্রন্টে পাকিস্তানি পজিশন ও ডিফেন্সের তথ্যসংগ্রহের সামরিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। এই চ্যালেঞ্জিং কাজে যখন কাউকে পাওয়া যায়নি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনাব মুসা হাসিমুখে এ দায়িত্ব পালনের শপথ নেন। পাকিস্তানি হানাদারদের চোখ এড়িয়ে বহুবার জীবন-মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও তিনি এ কাজে শঙ্কিত বা ভীত হয়ে পড়েননি। হাজার হাজার যুবকের মতো স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত এই নির্ভীক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ৮ নং সেক্টরে ভারতীয় সাংবাদিক জ্যোতি সিংসহ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন এবং পাকিস্তানি সেনারা তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর তিনি মারা গেছেন বলে যশোরের চাঁচড়া স্কুলের ঘরে ফেলে রেখে যায়। ৮ নং সেক্টরের বীর যোদ্ধা ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা পরদিন আমার কাছ থেকে খবর পেয়ে তার ফোর্স নিয়ে মুসাকে অজ্ঞান ও মুমূর্ষু অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এবং তিনি প্রাণে বেঁচে যান। মুক্তিযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে মুসার অপরিসীম অবদান এবং বীর যোদ্ধা ক্যাপ্টেন হুদা যেভাবে পাকিস্তানি সেনাদের গোলা বৃষ্টির মধ্যে নিজের জীবনের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে মুসার জীবন বাঁচিয়েছেন, সে জন্য তাদের উভয়ের নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করার জন্য এবং তাদের কাছে জাতির ঋণ স্বীকার করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সরকারের পক্ষে আমি এখানে স্বাক্ষর করলাম।" এই সেই সময়ের কথা, যখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়। যখন বাংলার হাজার হাজার তরুণ-কিশোর থ্রি-নট-থ্রি হাতে সকালে ফ্রন্টে গেছে, সায়াহ্নে পাকিস্তানি সেনাদের কামানের গোলায় মাংসপিণ্ডের দলা হয়ে ফিরে এসেছে। কাপড়ে বাঁধা সেই তরুণ-কিশোরদের মাংসপিণ্ডের দলা ছুঁয়ে তার সহযোদ্ধারা 'জয় বাংলা' মরণ জয়ী রণধ্বনি কণ্ঠে তুলে নিয়ে সেই সায়াহ্নে বীরবিক্রমে পা বাড়িয়েছে ফ্রন্টের গোলা-বারুদের মধ্যে। ফিরে আসেনি তারা কেউ প্রভাতে!

এই সেই হিরণ্ময় সময়ের কথা। এ সেই পুণ্যময় একাত্তরের কথা।

একাত্তরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহের একদিন দিনাজপুরের পাকিস্তানি সেনাদের রামসাগর ডিফেন্স পরিদর্শনে ঢাকা থেকে গোপনে একজন ভিআইপি আসছেন এবং সে জন্য দিনাজপুর সার্কিট হাউস রং চং করা হচ্ছে বলে দিনাজপুর শহরের এক রং ব্যবসায়ী সূত্রে ৭ নং সেক্টরের শিববাড়ী ক্যাম্প ইনচার্জ কমান্ডো জর্জ গোপনে এ তথ্য পেয়ে যায়। তখন থেকে তার শুরু হয়ে যায় ভিআইপিকে অ্যাম্বুশে ফেলার প্রস্তুতি। কিন্তু কে সেই ভিআইপি? কোন তারিখে সে ভিআইপি আসবে? কোন কোন রোড দিয়ে, কোথায়, কোথায়, যাবে সেই ভিআইপি? এ সবের কিছুই জানতে না পেরে শিববাড়ী ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা খুব হতাশ হয়ে পড়েন। ক্যাম্প ইনচার্জ কমান্ডো যোদ্ধা জর্জ ভিআইপি অপারেশনের জন্য তার ক্যাম্পের সবাইকে যে কোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে রাখেন। দিনাজপুর শহরের ওই রং ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঠার মতো একজনকে লাগিয়ে রাখেন তিনি। যদি কোনো সোর্সে, কোনো তথ্য পাওয়া যায় তৎক্ষণাৎ যেন তা শিববাড়ী ক্যাম্পে পেঁৗছে যায়। শেষ পর্যন্ত মে মাসের অর্ধেক চলে যায়, ভিআইপির নাম-নিশানা না পেয়ে শিববাড়ীর মুক্তিযোদ্ধারা ভুলেই গেল ভিআইপির কথা!

অকস্মাৎ মে মাসের শেষ সপ্তাহের এক বুধবারে দিনাজপুর সার্কিট হাউসের বাবুর্চির কাছ থেকে দিনাজপুরের ওই রং ব্যবসায়ী খবর পান যে, পরদিন ঢাকা থেকে আসবে জল্লাদ টিক্কা খান, যাবে রামসাগর পাকিস্তানি ডিফেন্স পরিদর্শনে। এ খবরে থর থর করে কেঁপে ওঠে শিববাড়ী ক্যাম্পের ইনচার্জ কমান্ডো যোদ্ধা জর্জ। এ খবরে দুলে ওঠে শিববাড়ী ক্যামপ। সাজ সাজ রব পড়ে যায় শিববাড়ী কমান্ডোদের মধ্যে! কে নেবে জল্লাদ টিক্কার জীবন? কে দেবে জল্লাদ টিক্কার জন্য নিজের জীবন? 'জয় বাংলা' রণহুঙ্কারে দাঁড়িয়ে পড়ে সবাই। জল্লাদ টিক্কার ওপর আঘাত হানতে যাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলে কেউ কেউ। দু'হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করে কেউ কেউ, 'হে আল্লাহ আমাদের লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জত হরণকারী ও আমাদের লাখ লাখ ভাই-বোনের হত্যাকারী জল্লাদ টিক্কা খানের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ আমাদের কামিয়াব করো, সফল করো...'। শিববাড়ী ক্যাম্প ইনচার্জ জর্জ তাদের মধ্যে থেকে সাহসী ও ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন কয়েকজন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধাকে বাছাই করেন অ্যাম্বুশের জন্য। জল্লাদ জেনারেল টিক্কা খানকে দিনাজপুরে অ্যাম্বুশে ফেলে হত্যার উদ্দেশ্যে শিববাড়ী ক্যাম্পে ছয়জনের একটি গ্রুপ তৈরি হলো ডিমোলিশন টিমের মধ্য থেকে। জগলুল পাশা, আনিস কাজী, আমিনউদ্দৌলা এবং ময়মনসিংহের শামসুল আলমসহ আরও দুজনকে নিয়ে। এদের মধ্যে শামসু সবচেয়ে বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। শামসুকে সবাই শামসু ডাকু বলে ডাকত। শিববাড়ী ক্যাম্প থেকে পাঁচ মাইল ভেতরে এদের যেতে হবে এটিএম মাইন বসানোর জন্য। মাইন বসাতে হবে এবিএম কলেজ ও জোড়া চিমনি রাইস মিল পুলহাট এলাকার রামসাগর রোডে। কোতোয়ালি থানা (দিনাজপুর) এলাকার মধ্যে এই কাজের ঝুঁকি যেমন মারাত্দক, পরিণতিও তেমনি ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, চারদিকে পুলিশ ও পাকিস্তানি সেনাদের টহল। তার সঙ্গে মোড়ে মোড়ে আছে স্থায়ী রাজাকার ক্যাম্প। তদুপরি, ওইদিন ওই রোডে আসছেন পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বেসর্বা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল টিক্কা। চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে, চারদিক সাজ সাজ রব। রোড দিয়ে হন হন করে ছুটে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানি হানাদারদের জিপ। টহল দিচ্ছে হানাদার ফৌজ। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে হানাদারদের চোখ এড়িয়ে মাইন বসানোর কাজে এগিয়ে যাওয়া, জেনারেল টিক্কার ওপর হামলা করা আজকের ঢাকায় ক্ষমতা, সম্পদ, অর্থ, গাড়ি-বাড়ি নিয়ে যারা কাড়াকাড়ি করছেন তা তাদের কল্পনার, বাসনার ও সাধ্যের বাইরে ছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর গণহত্যা ও অমানুষিক নির্যাতনের কথা বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় লিপিবদ্ধ আছে। অসংখ্য স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ বিদেশি পর্যবেক্ষকের বিবৃতি থেকে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, সুসংগঠিত হত্যা, ধর্ষণ ও অগি্নসংযোগসহ মারাত্দক অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৭২ সালের অক্টোবরে 'লন্ডন টাইমস' পত্রিকার ঢাকাস্থ নিজস্ব বার্তা পরিবেশক রচিত 'দি র্যাপ অব বাংলাদেশ' গ্রন্থে তিনি বাংলাদেশের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন : 'পূর্ব বাংলায় আমি যা দেখেছি তা হিটলারের নাৎসিদের অমানবিক কার্যকলাপ সম্পর্কে আমি যা পড়েছি, তার থেকেও ভয়াবহ। আমার নিজের দেশবাসীর উপরও এরকমটা ঘটেছে। পূর্ব বাংলায় কি যন্ত্রণাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে, তা নাহলে যন্ত্রণাদায়ক এই অপরাধবোধ চিরদিন আমাদের বুকে বয়ে বেড়াতে হবে'।

১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ সংখ্যায় লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সায়মান ড্রিংসের প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন : 'ছাত্ররা তাদের বিছানায় মারা গেছে, নারী ও শিশু তাদের গৃহে জীবন্ত অগি্নদগ্ধ হয়েছে। এ থেকে সামরিক লোকদের কার্যকলাপে ভয়াবহতা যথাযথভাবে অনুমান করা যায়।'

১৯৭১ সালের ৩ মে সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে ভ্যান কগিন- এর প্রতিবেদনে তিনি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলেন : 'একজন বৃদ্ধ লোক যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, সান্ধ্য আইনের চেয়ে শুক্রবারের নামাজ অধিক গুরুত্ববহ, তখন মসজিদের পথে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়'। ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবরের 'টাইম ম্যাগাজিন' পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক বর্বর ধর্ষণ কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যে, 'মারাত্দক ভয়াবহ যে সব ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ৫৬৩ জন যুবতী বাঙালি মহিলা সম্পর্কিত। তাদের মধ্যে কারও কারও বয়স মাত্র ১৮ বছর। যুদ্ধের প্রথম দিকেই তাদের ঢাকার সেনানিবাসের অভ্যন্তরে আটকে রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজেদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক তাদের সামরিক বেশ্যালয়ে আটকে রাখা হয়, মেয়েগুলোর সবাই তিন থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা'। ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত হরণের বিশ্বধিকৃত জেনারেল টিক্কা খান, জেনারেল নিয়াজি, জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ হানাদার এক লাখ পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, গুম, নিপীড়ন, অগি্নসংযোগ ও সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগে ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা বাঙালি জাতির স্বার্থে ও বিশ্ব মানব জাতির স্বার্থে অপরিহার্য।

আন্তর্জাতিক আইনে দণ্ডযোগ্য যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনাদের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন করার ও নথিপত্রসহ একটি দলিল প্রস্তুত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের নিউজ উইক-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী গণহত্যা ও ধর্ষণ ইত্যাদি জন্য তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাদের অপরাধ বিচারের জন্য 'আন্তর্জাতিক আইন, দায়, যুক্তি ও পটভুমি' সংবলিত একটি প্রামাণ্য দলিল তৈরির নির্দেশ দেন। বিচার আদালতে হবে কি হবে না, এরকম একটি চাপ ও পরিস্থিতির মুখে বঙ্গবন্ধু এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশ্বের কোটি কোটি বঙ্গজননী, বিশ্বের যিনি যেখানে আছেন, বাঙালির পুণ্যময় ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের পুণ্য প্রভাতে আপনার কোলের শিশুর কপালে আজ পরিয়ে দিন জয়টিকা। বিশ্বের ৩০ কোটি বাঙালির যে যেখানে আছেন, বিশ্বের দিকে দিকে আজ উড়িয়ে দিন বাঙালির বিজয় পতাকা। আর তাতে স্বর্ণাক্ষরে লিখে দিন 'বাঙালি বীরের জাতি, বাঙালি ৩০ লাখ শহীদের জাতি। বাঙালি শ্রেষ্ঠ জাতি, বাঙালি অমর জাতি। বাঙালি জাতির অমর প্রাণ, সূর্যের নামে নাম, শেখ মুজিবুর রহমান। আকাশে যতদিন সূর্য উদ্ভাসিত হবে এবং পৃথিবীর বুকে সূর্যকিরণ ছড়িয়ে পড়বে, ততদিন সূর্যের পাশে বীর বাঙালি জাতি উদ্ভাসিত হবে এবং সূর্যের মতো পৃথিবীর বুকে বাঙালি জাতি পুণ্য কিরণ ছড়িয়ে দেবে। সেই কিরণে উদ্ভাসিত হবে মানবজাতি। উদ্ভাসিত হবে পুণ্যালোকে, শুভকর্মে। জয় হোক বাঙালির। * লেখক : সাবেক সচিব ও স্বাধীন বাংলা বেতারের ওয়ার করেসপন্ডেন্ট

 

 

সর্বশেষ খবর