বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা

বিপ্রদাশ বড়ুয়া

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা

বাংলাদেশের প্রায় সব আদিবাসীর নিজস্ব মাতৃভাষা আছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ২৯টি আদিবাসীর নাম উল্লেখ করে মোট জনসংখ্যা ১২,০৫,৯৭৮। ২০১১ সালের জনগণনায় দেখা যায় ২৭টি আদিবাসী, জনসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। অন্যদিকে বাংলাদেশের আদিবাসী ফোরাম প্রকাশিত ২০০৮ সালের স্মরণিকায় পাই ৪৫টি আদিবাসীর উল্লেখ। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভাষা হচ্ছে সাঁওতাল, চাকমা, তন্চঙ্গা, মারমা, গারো (মান্দি), ত্রিপুরা (ককেবারক্), সাদরি (এবং কুড়ঁক), খেয়াং, খুমি, লুসাই, মুণ্ডা, মণিপুরী (মৈতিই ও বিষ্ণুপ্রিয়া), মুরং, পাংখোয়া, হাজং, খাসি প্রভৃতি। এই ভাষাগুলো বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষাপরিবারের সদস্য। বাংলা ভাষাও যেমন গর্বিত সদস্য। প্রায় সব আদিবাসীর নিজস্ব মাতৃভাষা থাকা সত্ত্বেও তারা সবাই নিজেদের জীবিকা ও জীবনধারণের প্রয়োজনে অন্তত দ্বিতীয় আর একটি ভাষা অর্থাৎ বাংলা জানে বা লিখতে বাধ্য হয়। চা-শ্রমিক বা মেথর-মুচিদের দেখুন শহরে-নগরে। বাংলা জানে। উত্তরবঙ্গের (রংপুর জেলার) অনেক ওঁরাও জানে বাংলা। সাঁওতাল এবং সাদরি ভাষা। মারমা, মুরং, পাংখো, বনযোগীদেরও অনেকে বাংলা জানতে বাধ্য হয়েছে জীবন ও জীবিকার তাগিদে। আমি ছেলেবেলায় আমার গ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে শুনেছি অনেক মুখরোচক ঠকানোর গল্প আবার বাঙালিদের নাস্তানাবুদ হওয়ার স্বীকারোক্তিও। আমার গল্প-উপন্যাসে তেমন অনেক চরিত্র মিলবে। সেই তুলনায় সাধারণ এবং শিক্ষিত বাঙালিরা বরং নিজের দেশের আদিবাসীদের ভাষা জানে না। জীবন ও জীবিকার তাগিদে আদিবাসীদের বাংলা ভাষা শিখতে হয়। সরকার ভালোবেসে তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নামে তকমা এঁটে দিলেও মেনে নিতে হয়। অথচ তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পকলা ইত্যাদি উন্নত জাতিসমূহের কাছে বিস্ময়কর।

তেমনি রয়েছে চাকমাদের উন্নত ভাষা ও সাহিত্য। দুই শতাব্দী আগেও চাকমা লিপিতে সাহিত্য রচিত হতো। সাহিত্যিক নন্দলাল শর্মা আরও লিখেছেন, ‘এমনকি মধ্য যুগের কয়েকটি বাংলা কাব্যগ্রন্থও চাকমা লিপিতে লিখিত হয়েছে। সে সময় চাকমা লিপির ব্যবহার হলেও তা ছাপার অক্ষরে প্রকাশের সুযোগ হয়নি। ১৮৮৬ সালে খ্রিস্টান মিশনারিরা উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের একটি ছাপাখানা থেকে চাকমা ভাষায় অনূদিত বাইবেল চাকমা লিপিতে প্রকাশ করে।’

২০১৭ সাল থেকে সরকারিভাবে প্রথমে চাকমা ভাষার প্রাথমিক বই ছাপা হয়েছে মতিঝিলের পাঠ্যপুস্তক ভবন থেকে, নিজে গিয়েও সে বই সংগ্রহ করতে পারিনি। মারমা ও ত্রিপুরী বা অন্য অন্য ভাষায় ছাপা হয়েছে কি? সাজেক পাহাড়ে ত্রিপুরী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলেছি। হায়, ওদের ভাষা যে আমি জানি না, অথচ ওরা আমার ভাষা জানে। এই দীনতা আমাকে দহন করে, বিশেষত সাজেকের  খুশিরায় ত্রিপুরার কথা। একেবারে নিম্নশ্রেণি পড়া ঝলমলে শিশুটি। তাহলে আমার লেখা ‘মাতৃভাষা চর্চার অধিকার জন্মগত’ থেকে শুনুন, ‘খুশিরায় ত্রিপুরা জাতিসত্তার এক ছাত্র। মা-বাবা জুম চাষের শত ব্যস্ততার মধ্যেও ছেলেকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখান ও নিজেরা দেখেন। ক্লাসে পড়া বুঝতে ভারি কষ্ট হয় তার। জন্মের পর বোধ হওয়া থেকেই তো দেখেছে জুম, পাহাড়, নদী, ছড়া, গাছপালা, পশু-পাখির সঙ্গে মধুর বাধাবন্ধহীন খেলার জগৎ। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এসব কিছু তেমনভাবে নেই। বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে তার থেকে একেবারে আলাদা পাঠ্য বইয়ের ভাষা। মা-বাবা ও পাড়ার সবার সঙ্গে কথা বলে ত্রিপুরী ‘কক্বরক্’ ভাষায়। তবুও সে চেষ্টা করে। লেখাপড়ার জন্য কষ্ট করতে হয়, মা-বাবা তাকে বলে বলে বোঝান। তোতাপাখি ও ময়নার মতো সে শিখে যায়, পড়ে যায় স্কুলের পড়া। ‘আমার সোনার বাংলা’ গায় স্কুলে সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে। সুরে সুরে হয়তো মুগ্ধ হয়।

এক দিন তাতেও বিপত্তি ঘটল। স্কুলে যে শিক্ষক তার পড়া নিচ্ছিলেন তিনিও একজন ত্রিপুরী। তিনি খুশিরায়কে প্রশ্ন করলেন, ‘বলো তো আমাদের মাতৃভাষার নাম কি?’

খুশিরায় অমনি জবাব দিল, ‘আমাদের মাতৃভাষার নাম কক্বরক্।’ তার উত্তর শুনে কক্বরক্-ভাষী শিক্ষকের সন্তুষ্ট ও খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলেন না। তাঁর মনে পড়ল ছেলেবেলায় তাঁকেও একদিন এই প্রশ্ন করেছিলেন। তিনিও একই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একই ‘ভুল’ করেছিলেন। ওই ভুল করে শাস্তি পেয়েছিলেন এবং নিজের উত্তর শুধরে নিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষকের ভুল উত্তর থেকে। তাঁর ছাত্র খুশিরায়ও যাতে লেখাপড়ায় অবহেলা না করে, পড়াশোনার প্রতি অবহেলার কারণে ভুল উত্তর দিতে আর কোনোদিন ভুল না করে তার জন্য কঠোর শাস্তি দিলেন পিঠে বেত মেরে। গুরুর শাস্তি পিঠ পেতে নিয়ে অশ্রু চোখে তাকিয়ে থাকল। তাহলে তার খাইপ্ল (চালতা), থাক্তুই (মিষ্টি আলু), রি-চুম্ (কাপড়-চোপড়), পুখিরি (পুকুর), পূন্ (ছাগল), ছেত্তোয়াং বফাং (ছাতিমগাছ), নখা (আকাশ) তার নয়? নিজের মতো করে মায়ের সঙ্গে কথা বলা কি তার নয়? তার মায়ের ভাষা কেন কক্বরক্ না হয়ে বাংলা হবে তা সে কোনোভাবে বুঝতে পারেনি। তার মা তো ঘরে তার সঙ্গে কক্বরক্ ভাষায় কথা বলেন। তাহলে!

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মূলত বাংলা ভাষাভাষী শিশুদের জন্য রচিত। তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়বস্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডলকে নিয়ে বিবেচিত ও রচিত। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে চারটি প্রধান ধর্ম সম্পর্কে আলাদা বই রচনা করে গোড়া থেকে শিশুদের মধ্যে এক রকম বিভাজন সৃষ্টি-ক্রিয়া। আবার বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায় যে, প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠদান প্রস্তুতি শিশুর মানসিকতাকে আকৃষ্ট করতে পারে না। তাদের ওপর দৈহিক শাস্তিদানও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কি? আরও জানা যায় যে, প্রথম শ্রেণি থেকে শতকরা ৩০টি শিশু স্কুল ত্যাগ করে যায়। আর যে মাতৃভাষার দোহাই দিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে সেই মূল ও মৌলিক শক্তি অবহেলিত হচ্ছে। বিশ্বের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্যই আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি। তা যদি সঠিকভাবে পালিত না হয় তাহলে পৃথিবী থেকে বহু ভাষা হারিয়ে যাবে এবং তা বাংলাদেশ থেকেই শুরু হয়ে যাবে বা এরই মধ্যে শুরুর প্রক্রিয়া হয়তো সূত্রপাত হয়ে গেছে। তাতে বিশ্ববৈচিত্র্য হয়ে যাবে দীনহীন ভিখারি। বিশ্বের জীব ও উদ্ভিদ-বৈচিত্র্যের মতো ভাষা-বৈচিত্র্যও পৃথিবীর প্রাণসম্পদ। তেমনি ঋতুবৈচিত্র্যও, জাতিবৈচিত্র্যও। মানুষ, জীবজন্তু, নদী, গাছপালা, কীটপতঙ্গ, ব্যাকটেরিয়া থেকে অনন্তবীথি নক্ষত্র নিয়ে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। জাতিবৈচিত্র্য থেকে ধর্মবৈচিত্র্য কোনো কিছু অপাঙেক্তয় বা অবহেলার বা শুধু ধারণা নয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল পরস্পরের ওপর।

গুহাবাসী আদিম মানুষ যখন ঘরবাড়ি নির্মাণ বা চাষবাস শিখল। গুহাচিত্র থেকে লিপি আবিষ্কার করল কিংবা গান গাইতে শিখল আদিম মানুষ যখন সভ্যতা গড়ে তুলল, অতীতকে ছুড়ে ফেলে না দিয়ে তা ধরে রাখতে শুরু করল। আবিষ্কারের পর আবিষ্কার করে বর্তমানকালে এসে পৌঁছল তখন মানুষ আর পিছিয়ে যেতে পারে না। জ্ঞান বেয়ে যাওয়ার তরণী, কাঁধে নিয়ে ভারবাহী হওয়ার জন্য নয়। সংখ্যালঘু বলে কাউকে পেছনে ফেলে গেলে সে পেছন থেকে ডাক পাড়বে, টেনে ধরবে। বরং দলগত দৌড় প্রতিযোগিতা, একজনের হাতের কাঠি বা জ্ঞানের মশাল অন্যজনের হাতে তুলে দিয়ে দিয়ে মানুষ বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এই চাওয়ার শেষ কোথায় মানুষ নিজেও জানে না। যেদিন জানবে সেদিন থেকে স্থবির, মানুষেরও সমাপ্তি। এই পৃথিবী থেকে কত প্রাণী লুপ্ত হয়ে গেছে এভাবে। বিশাল বিশাল ডাইনোসরও টিকে থাকতে পারেনি।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষার পাঠ্যবই পেয়ে আসছে গত বছর থেকে। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক পায়নি। আমার পরিচিত ইনজেব চাকমা, চাকমা-বই ছেপেছেন শিশু শ্রেণির জন্য। সেই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও বিতরণ অনুষ্ঠানে আমি যোগদানের কথা দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত যেতে পারিনি। আমরা কতভাবে তাদের অবহেলা করি।

১৯০৯ সালে ব্রিটিশ রাজত্বের কালে শ্রী সতীশচন্দ্র ঘোষ তাঁর অমর গ্রন্থ ‘চাকমা জাতি’ প্রকাশ করেছিলেন। ‘গ্রন্থকারের নিবেদন’-এর নিচে লেখা আছে, ১লা আগস্ট ১৯০৯, রাঙামাটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে এমন মূল্যবান আকর গ্রন্থ আর লেখা হয়নি এখনো পর্যন্ত। সেখানে ‘রাধামন-ধনপতি’ উপাখ্যান চাকমা ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। এখানে চাকমা রাজপুত্র জয়গিরির সেনাপতি রাধামন-এর মগদেশ, খায়ংরাজ্য এবং অক্সা দেশ বিজয়ের বিস্তৃত বর্ণনা আছে। চম্পকনগর ও অক্সা থেকে চাকমারা এখন রাঙামাটিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হয়ে চাকমা ভাষায় শিশু শ্রেণিতে পঠন-পাঠনে নিয়োজিত হতে চায়।

চাকমা জাতি গ্রন্থে ১৯০১ সালের আদমশুমারির তথ্য মতে দেখা যায়, ‘তাহাদের প্রায় অর্ধলক্ষ অধিবাসীর মধ্যে ২১৫৬ জন পুরুষ এবং ৪৪ জন স্ত্রীলোক মাত্র শিক্ষিত। তন্মধ্যে ৭৮৮ জন পুরুষ ও ২৪ জন স্ত্রীলোক বাংলা ভাষা আর ৫৫ জন পুরুষ মাত্র ইংরেজি জানে। অবশিষ্ট পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা চাকমা ভাষা লিখিতে পড়িতে পারে। পক্ষান্তরে বাংলা ভাষা শিক্ষিতদিগের মধ্যে ২৯০ জন পুরুষ ও চারজন স্ত্রীলোক চাকমা লেখাপড়াতেও পরিপক্ব এবং ১২ জন পুরুষের মঘভাষাতে অভিজ্ঞতা আছে।’ এক কথায় শতকরা সাড়ে ৪ (৪.৫) জন মাত্র কোনোরূপে শিক্ষিত সংজ্ঞালাভের যোগ্য।

এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, “এই জেলায় মোট প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা বালকের-৯০ এবং বালিকার-২; তাছাড়া ২৩ খানি ক্যাংস্কুল এবং ৪ খানি মক্তবও আছে। এই শিক্ষা বিস্তৃতির মূলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূতপূর্ব সিভিলসার্জ্জন ও শিক্ষাবিভাগের অবৈতনিক সেক্রেটারি রায়সাহেব শ্রীযুক্ত ব্রজনাথ সাহা এবং অত্যত্র স্কুলসমূহের ভূতপূর্ব ডেপুটি ইন্সপেক্টর পরলোকগত গগনচন্দ্র বড়ুরা মহোদয়দ্বয়ের চেষ্টা সাতিশয় প্রশংসাই। ...এতদ্ভিন্ন খাস গভর্নমেন্টেরই সম্যক পরিচালনাধীনে রাঙামাটিতে এক উচ্চ ইংরেজি স্কুল চলিতেছে, ... এই স্কুল প্রথমত ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রঘোনায় স্থাপিত হয়। তখন ইহার ‘চন্দ্রঘোনা বোর্ডিং স্কুল’— আখ্যা ছিল। ইহাতে দুজন মাত্র শিক্ষক ছিলেন, ছাত্রগণও মাত্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল।

অনন্তর সমগ্র স্কুল দুই প্রধান ভাগে বিভক্ত হইয়া একভাগের শ্রেণিগুলির নাম হইল ‘বার্ম্মিজ ক্লাস’ অন্য ভাগের শ্রেণিগুলোর নাম হলো ‘চাকমা ক্লাস’। বার্ম্মিজ ক্লাসে বার্ম্মিজ, ইংরাজি ও বাঙ্গলা বা বার্ম্মিজ ও বাংলা ভাষা পড়ান হইত এবং চাকমা ক্লাসে-বাঙ্গলা বা ইংরাজি অথবা কেবল বাঙ্গলা অধ্যাপনা চলিত।

অনন্তর ১৮৬৯ অব্দের প্রারম্ভেই ডেপুটি কমিশনার অফিস চন্দ্রঘোনা হইতে রাঙামাটিতে উঠিয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্গে এই স্কুলও চলিয়া আইসে; তখন হইতে ইহা ‘রাঙামাটি গভর্নমেন্ট বোডিং স্কুল’ নামে অভিহিত হইয়া আসিতেছে।... ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে ইহাতে উচ্চ ইংরাজিতে উন্নীত করিয়াছেন। এযাবৎ ইহাতে ১২ জন পাহাড়ি এবং ২৬ জন বাঙ্গালি ছাত্র প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হইয়াছে।” (চাকমা জাতি শ্রী সতীশচন্দ্র ঘোষ)।

দীর্ঘ এই উক্তিগুলো থেকে এদেশে ইংরেজদের ইংরেজি, চাকমা ও বার্মিজ ভাষা শিক্ষা বিস্তারের প্রচেষ্টা নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন স্থায়ী করার জন্যই। এখন আমরা কোন পথে হাঁটব? শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি নাকি মাতৃভাষা শিক্ষার অধিকার থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের দূরে সরিয়ে রাখব সুকৌশলে! দেশের মানুষকে ভালোবেসে নাকি শাসকের দণ্ডবিধি হাতে নিয়ে, শাসকের রাজদণ্ড নাকি মাতা-পিতার শাসনদণ্ড হাতে নিয়ে!

লেখক : কথাসাহিত্যিক।

 

সর্বশেষ খবর